৪ঠা এপ্রিল, ১৯৯৭ সাল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ হারলেই আইসিসি ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু শেষ হাসিটা ছিল আকরাম খানের দলের। হ্যাঁ, তার হাত ধরেই ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রবেশ করে টাইগাররা। এরপর বাংলাদেশের ক্রিকেট পেরিয়ে যাচ্ছে নানা চড়াই-উতরাই। আকরাম খেলা ছেড়েছেন বহু আগেই। হয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে। প্রায় ৮ বছর ধরেই এই পদে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তবে বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না তার। বিশেষ করে গেল কয়েক মাসে সাকিব আল হাসান, খালেদ মাহমুুদ সুজন ও শফিকুল হক হীরার বেশ কিছু মন্তব্য প্রশ্ন তুলেছে আকরামের যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ব পালন নিয়ে। যা নিয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ ও তিনি পড়েছেন চরম বিতর্কের মুখে। হঠাৎ কেন এত কথা! নেপথ্যেই বা কী! এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মুখ খুলেছেন। দৈনিক মানবজমিনকে আকরাম খান বলেন, ‘বিসিবিতে একটাই বিভাগ ক্রিকেট অপারেশন্স, যেখানে সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম। অন্য যে কোনো বিভাগের চেয়ে এখানে চাপ ও দায়িত্ব অনেক বেশি। তাই আলোচনা-সমালোচনাতো থাকবেই। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এই বিভাগকে ঘিরেই। য কারণে সবাই এখানে আসতে চায়। সবার চোখ আমার চেয়ারের দিকে।’ আকরাম খানকে ঘিরে সম্প্রতি সমালোচনার শুরুটা করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আকরামকে নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, টেস্টে ছুটি চেয়ে পাঠানো তার চিঠি ঠিকমত পড়েননি অপারেশন্স চেয়ারম্যান। এর কয়েকদিন পর গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আকরাম নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত তাই ক্রিকেটারদের খবর রাখতে পারেন না। শফিকুল হক হীরা প্রশ্ন তুলেছেন আকরামের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। এসব কড়া ও নেতিবাচক বক্তব্য নিয়ে আকরাম অবশ্য পরোয়া করছেন না। তিনি বলেন, ‘আই ডোন্ট কেয়ার। এসব নিয়ে আমি তেমন কিছুই ভাবি না। সিস্টেমটাই এরকম, আমার ক্যারিয়ারও সবসময় থ্যাংকসলেস ছিল। আগে খেলোয়াড় ছিলাম, ভালো খেললে তালি দিতো, আর খারাপ খেললে গালি খেতাম।’ এছাড়াও আকরামের মতে এখনকার ক্রিকেটাররা তাদের চেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান। তিনি বলেন, ‘এখন ক্রিকেটারদের অনেক বেশি সিকিউরিটি থাকে। খেলোয়াড়দের সামনাসামনি গালি দিতে পারে না। কিন্তু যখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আমরা খেলেছি, সকাল থেকেই ভালো খেললে তালি আর খারাপ খেললে গালি দিত। আমরা অভ্যস্ত। যখন অধিনায়ক হলাম তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল।’কিছুদিন আগেই বিসিবির পরিচালক ও গেম ডেভালপমেন্টের চেয়ারম্যান সুজন দাবি করেছিলেন, আকরাম তার ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকার সময় পান না। তবে আকরাম ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে কতটা সজাগ দৃষ্টি রাখেন, তা জানালেন নিজের মুখেই। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে সবসময় সজাগ বলেও জানান আকরাম। তিনি বলেন, ‘৮ বছর ধরে আমি ওনার (নাজমুল হাসান পাপন) অধীনে আছি, খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধার কোনো ব্যাপারে উনি কখনও না করেননি। এটা সবার জানা উচিৎ এবং আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই। এমনও হয়েছে, ঈদের পরের দিন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ফোন করেছে ওরা ইনডোরে প্র্যাকটিস করবে। তখন মাঠের সবাই ছুটিতে ছিল। ওদের অনুরোধ করে ইনডোর খুলে দিলাম, অ্যাকাডেমি মাঠ খুলে দিলাম। এগুলো তো বলা হয় না। দুই-একটা ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম হলে মিডিয়ায় চলে আসে।’বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুই-তিন জন ছাড়া প্রায় সব পরিচালকই নিজেদের ব্যবসা-বানিজ্যের বড় একটি দুনিয়া আছে। আকরাম খানের নিজের পারিবারিক ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এই কারণেই তিনি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। এমনকি অনেক খবরও রাখেন না। আকরাম বলেন, ‘আমার দায়িত্ব আমি ঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করি, পারি না পারি সেটা অন্য কথা। আমি ব্যবসা করি এটা আমার ইচ্ছা, আমার মন যেটা চায় সেটা। আমি ক্রিকেট খেলেছি এটা আমার ইচ্ছা। আপনি সাংবাদিকতা করেন এটা আপনার ইচ্ছা। কাউকে তো এক মাস মূল্যায়ন করলে হবে না। এগুলো বলতে আমার ভালো লাগে না। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া তিনি আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে বানিয়েছেন তাও এমন একটি দেশে যেখানে ক্রিকেট খুব দরকার ছিল এবং সব পর্যায়েও আমি ছিলাম।’ক্রিকেটারদের প্রতি আকরামের আহ্বানক্রিকেটারদের এমন কাদা ছোড়াছুড়ি ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেই মনে করেন আকরাম। তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি কয়েকজন জুনিয়র ক্রিকেটার সাবেক সিনিয়রদের নিয়ে নানা বেফাঁস মন্তব্য করছে। আবার কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারও একই কাজ করছে। আমি মনে করি এসব দেশের ক্রিকেটের ভাবমুর্তিকে নষ্ট করছে। আপনি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতের দিকে তাকান তারা কিন্তু একে অপরকে দারুণ সম্মান করে। মতবিরোধ থাকলেও এমন বাজে কথা বলে বেড়ায় না। আমাদের সময় আমরা যেভাবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্মান করেছি। সেটি এখন আর নেই। আমি বলবো এগুলো দেশের ক্রিকেটের পরিবেশ নষ্ট করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে পারবে না।’