বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কখনও তুষার দেখেননি, এমনটা বলা যেতেই পারে। কারণ, আমাদের দেশে কখনও তুষারপাত হয় না। যতদূর জানি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪/৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুষারপাতের জন্য তাপমাত্রা আরও নিচে নামা জরুরি। তবে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবেও আজকাল তুষারপাত হয়, মাঝেমাঝে। টিভি পর্দায় সেই অপূর্ব দৃশ্য আমরা দেখি। যদি ভবিষ্যতের কোনো একদিন বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে তুষার তার অনিন্দ সৌন্দর্য নিয়ে আকাশ থেকে নেমে আসে, তবে অন্তত আমি অবাক হব না।
বাংলাদেশে তুষারপাত না-হলেও, আমার মতো অনেক বাঙালি তুষার দেখেছেন ও নিয়মিত দেখছেন; বিদেশে থাকার বা যাবার সুবাদে। আমি প্রথম তুষার দেখি যুক্তরাষ্ট্রে, ২০০৭ সালে। সেটা অবশ্য ছিল পাহাড়ের শৃঙ্গে জমে থাকা তুষার। আকাশ থেকে নেমে আসা তুষারের প্রথম দেখা পাই ২০১২ সালে, চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। সেই থেকে তো প্রতিবছরই তুষার দেখছি! তুষার আমার বরাবরই পছন্দ। আকাশ থেকে তুষার নেমে আসার দৃশ্য যেমন চমত্কার, তেমনি তুষারে ছেয়ে যাওয়া মাঠ-ঘাট-রাস্তা দেখাও আনন্দের।
যারা তুষার দেখেননি, তাদের জন্য অবাক-করা তথ্য হচ্ছে, প্রতিটি তুষারের ছয়টি ‘হাত’ আছে। হাতের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে; তবে, ছয়টি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড। ছয়টি হাতের প্রতিটির ওপর আবার সৃষ্টি হতে পারে নতুন নতুন শাখা-প্রশাখা। খুব বিরল হলেও, কখনও কখনও বার হাতসমৃদ্ধ তুষারকণাও দেখা যায়। তবে, এ ধরনের তুষারকণা গড়ে ওঠে ছয়টি হাতের ওপর ভিত্তি করেই। প্রকৃতিতে ছয় হাতের আদর্শ ও প্রতিসম আকৃতির তুষারকণার সংখ্যা আবার খুবই কম, মাত্র ০.১ শতাংশ।
তুষারকণার গড়ন কমবেশি ৮০ ধরনের হতে পারে। এ গড়ন নির্ভর করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর। কোনো দুটি তুষারকণা পুরোপুরি একরকম হয় না। এমনকি, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে পুরোপুরি একরকম দুটি তুষারকণা তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছেন এখন পর্যন্ত। তবে, তারা এ প্রচেষ্টায় খুব কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন বলে জানা গেছে।
তুষারকণার আকারও কমবেশি হয় স্বাভাবিকভাবেই। অনেকসময় অনেকগুলো তুষারকণা একত্রিত হয়ে ‘সুপারকণা’য় পরিণত হয়। সাধারণত এমন সুপারকণার প্রস্থ হয় তিন থেকে চার ইঞ্চি। তবে, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে, বিশ্বের বৃহত্তম সুপারকণার প্রস্থ ছিল প্রায় ১৫ ইঞ্চি! এটি পাওয়া গিয়েছিল ১৮৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানায়। সাধারণভাবে একটি একক তুষারকণার ব্যাস হয় ১৭.৯১ মিলিমিটার। তুষারকণা সাদা কেন হয়? এর তো স্বচ্ছ হবার কথা! এটি হলো আলোর বর্ণালীর কারসাজি। তা না-হলে, প্রতিটি তুষারকণার স্বচ্ছ হবারই কথা ছিল।
অনেকেই জানেন, পৃথিবীপৃষ্ঠের মোট আয়তনের প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে হিমবাহ। হিমবাহ সারা বছরই তুষারে আবৃত থাকে। শীত মৌসুমে এর সাথে যুক্ত হয় আরও প্রায় ৯ শতাংশ তুষারাবৃত ভূমি। স্বাভাবিকভাবেই তুষারপাত সবচেয়ে বেশি হয় পৃথিবীর উত্তর মেরু অঞ্চল ও এর চারপাশে। ১৯৯৮-১৯৯৯ শীত মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বেলিংহাম শহরের বাইরে অবস্থিত মাউন্ট বেইকার স্কি এলাকায় মোট ২,৮৯৬ সেন্টিমিটার (৯৫.০১ ফুট) তুষারপাত হয়েছিল। এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড। আর জাপানের আওমরি শহরের সুকায়ু ওনসেনে ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে তুষারপাত হয়েছিল ১৭৬৪ সেন্টিমিটার (৫৭.৮৭ ফুট) করে। এটিও একটি বিশ্বরেকর্ড।