গত দুই সপ্তাহ গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর কিয়ামতের এক নিষ্ঠুর আলামত বয়ে গেল। শিশু-নারী-বৃদ্ধ জীবন হারাল কয়েক শ। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেম নিয়ে এ সংঘর্ষ লেগেই আছে। পশ্চিমা দেশসমূহ ইসরায়েলকে নানাভাবে আশকারা দেওয়ায় পদে পদে বিশ্বমানবতার সঙ্গে নির্মম অমানবিক আচরণ করে চলেছে। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ঘরবাড়ি, নিষ্পাপ শিশুর কান্নায় হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তবু কোনো প্রতিকার হয় না। দীর্ঘ ১২ দিন কিয়ামতের তান্ডব চলার পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করেছে। কিন্তু তারপর দিনই পবিত্র আল আকসা মসজিদে প্রবেশ নিয়ে আবার সংঘর্ষ। বিশ্বমানবতার এখানে তৎপর হওয়া উচিত। বিশ্বময় মুসলিম দেশগুলো এক কাতারে শরিক হয়ে ফিলিস্তিনি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা প্রয়োজন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকে ভীষণ ভালোবাসতেন। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে বিশ্বদরবারে দৃঢ় সমর্থন জানাতেন। আশির দশকে ভারতে নির্বাসিত থাকার সময় এক জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা। ভারতে নির্বাসনে থাকাকালে তিনবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তিনি ‘টাইগার’ বলতে পারতেন কি না জানি না, দ্বিতীয় দেখা থেকে ‘তাইগার তাইগার’ বলতেন। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ঢাকায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ডিসেম্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্বমানবতার দূত দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানিক নেলসন ম্যান্ডেলা, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল ও ইয়াসির আরাফাত রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনায় এসেছিলেন। দ্বিতীয়বার বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি। তিনি মহামান্য অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। ইয়াসির আরাফাত ‘তাইগার তাইগার’ বলে জাপটে ধরেছিলেন। সেই ইয়াসির আরাফাতের ফিলিস্তিন সাধারণ মানুষ, ছোট ছোট বাচ্চারা যখন ইসরায়েলের নিষ্ঠুর আক্রমণে প্রাণ হারায়, শহরের পর শহর তছনছ হয় তখন মানবতার ধ্বজাধারীদের কলঙ্কজনক কর্মকান্ড দেখে বিস্মিত হতে হয়। যাক তবু যুদ্ধবিরতি হয়েছে, মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে সেটাই বড় কথা। বিশ্বমানবতার প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি স্বীকার করে এর সুষ্ঠু স্থায়ী সমাধান করুন।