মিয়ানমারে বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসের এক সাংবাদিকসহ দুজন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাতে সাদাপোশাকে এসে কয়েকজন ওই দুই সাংবাদিককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এদিকে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে আজ শনিবার আরও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন দেশটির বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো ও পশ্চিমা দেশও মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
মিয়ানমার অভ্যুত্থান: বিবিসির সাংবাদিক আটক, সেনাবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত মিয়ানমারে বিবিসির বার্মিজ ভাষা বিভাগের এক রিপোর্টারকে আটক করা হয়েছে। গত মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অব্যাহত বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে এই সাংবাদিক আটক হলেন। বিবিসির বার্মিজ বিভাগের রিপোর্টার অং থুরা রাজধানী নেপিডতে কোর্ট ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে যখন কাজ করছিলেন, তখন সেখান থেকে তাকে সাধারণ পোশাকধারী লোকজন তুলে নিয়ে যায়।
মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: একদিনে নিহত ৫০, নতুন নতুন স্থানে সামরিক আইন মিয়ানমারে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে অব্যাহত প্রতিরোধ বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। ১৫ মার্চ রোববার ছিল সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে ওইদিন সৈন্যরা গুলি চালালে ৫০ জনের মত মারা গেছে বলে খবর পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে।
মিয়ানমারে এই সেনা অভ্যুত্থান কেন? অং সান সু চি ও তাঁর সরকারের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা চলছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর। এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল যেদিন, সেদিনই সু চি, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ও অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের আটক করেছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে হঠাৎ এই সেনা অভ্যুত্থানের কারণ কী?
সামরিক অভ্যুত্থান: মিয়ানমারের এই পেছন ফেরা কেন? বিশ্ব জুড়ে মিয়ানমারের জন্য বিশেষ কুখ্যাতি ছিল সামরিক শাসনের জন্য। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর গত ৭২ বছরে মিয়ানমার মাত্র ১৫ বছরের মতো বেসামরিক সরকারের অধীনে কাটিয়েছে। সেই দুর্ভাগ্য আবারও জেঁকে বসেছে দেশটিতে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নতুন পার্লামেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে গতকাল সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করেছে দেশটিতে। অং সান সু চিকে আটকের পাশাপাশি শাসক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক প্রায় সব পরিষদ সদস্যকে বন্দী করা হয়েছে একই সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট ইউনি মিন্টও সশস্ত্র বাহিনীর কবজায় রয়েছেন। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই নাটকীয়তায় পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে গেছে।