বাংলাদেশ সবেমাত্র উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাল। উন্নয়নশীল হওয়া যেমন আনন্দের, তেমনি বাড়তি দায়িত্বেরও বটে। আর বাংলাদেশ যখন পুরোপুরি একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে, তখন তার রূপ এবং দায়িত্ব দুটোই পাল্টে যাবে। এটা কি আপনি বুঝতে পারছেন?
এখন যখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এসেছে, বাংলাদেশ কিন্তু অনেক আন্তর্জাতিক সুবিধা থেকে বাদ পড়বে। এবং এটাই স্বাভাবিক। দরিদ্র দেশগুলো যেসব সুবিধা পায়, সেটা তো আর আমরা এখন আশা করতে পারি না। সেটা যৌক্তিকও নয়। সেই দেশের নাগরিক হিসেবে তাহলে আপনারও মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। আপনি এখন উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক, আর চিন্তাচেতনায় দরিদ্র, তাহলে তো আর হলো না। আপনার চিন্তাকেও উন্নত করতে হবে।
ভূমিকাটুকু দিলাম এ কারণে যে, এখন থেকে সবাইকে ভাবতে হবে, কীভাবে পুরো সমাজকে, মানুষকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া যায়। প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রগুলোতে চেষ্টা করলেই মানসিকতার পরিবর্তন আসবে। আর মানসিকতার পরিবর্তন এলেই দেখবেন তার ছোঁয়া সর্বত্র পড়ছে।
আমার কাজের ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। এবং আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি সামনে যেতেই পারবে না। শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এ সময়ে।
বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা বই না পড়লেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লাসের লেখাপড়া তো বটেই, তার বাইরেও অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারে। কিন্তু তাদের একটা ডিভাইস লাগবে। শিক্ষার অসংখ্য ম্যাটেরিয়াল এখন সে চাইলেই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারে, যা আমাদের সময় সম্ভব ছিল না। বর্তমান সময়ের ছাত্রছাত্রীদের একটি ডিভাইস হলে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম আরো উন্নত হতে পারে।
ল্যাপটপ দান করুন
বাংলাদেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী ডিজিটাল ডিভাইস পেয়ে যাবে, সেটা সম্ভব নয়। এটা সরকারের পক্ষে দেয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেও কেনা সম্ভব নয়। বেশিভাগ পরিবার তাদের সন্তানদের ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কিনে দিতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা।
আমরা যেহেতু সব ছাত্রছাত্রীকে ডিজিটাল ডিভাইস দিতে পারব না, তাই যতটুকু পারা যাবে তাদের যদি ল্যাপটপ দেয়া যায়, তাহলে সেই ছাত্রছাত্রীরা তো অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে। আর সেই প্রক্রিয়াটাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনার পুরোনো ল্যাপটপটি দান করে দিন।
কেউ যদি নতুন ল্যাপটপ কিনে কোনো স্কুল/কলেজে দিতে চান, তাহলে তো কথাই নেই। সেটা হবে সবচেয়ে ভালো কাজ। কিন্তু নতুন ল্যাপটপ হয়তো অনেক ব্যয়সাপেক্ষ বিষয় হবে। আপনার পুরোনো ল্যাপটপগুলো দিয়ে দিতে পারেন। অনেক অফিসে পুরোনো ল্যাপটপ থাকতে পারে। আবার অনেকের কাছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ল্যাপটপ থাকতে পারে।
পুরোনো ল্যাপটপগুলো আমাদের দিতে পারেন। আমরা সেগুলো ঠিক করে পরীক্ষা করে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে দিতে পারি। বিস্তারিত জানা যাবে প্রিয়.অর্গ (https://priyo.org)।
পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রিও করে দিতে পারেন
সব সময় আপনি ল্যাপটপের মতো দামি একটি জিনিস দান করে দেয়ার মতো অবস্থায় না-ও থাকতে পারেন। বিশেষ করে অনেক অফিসে পুরোনো ল্যাপটপ থাকতে পারে। সেগুলো হয়তো বিক্রি করে দেয়া যেতে পারে। যদি কেউ ল্যাপটপ বিক্রিও করতে চান, সেগুলো সহনীয় দামে হলে তার মাধ্যমেও আমরা ল্যাপটপ সংগ্রহ করতে পারি। তারপর সেই ল্যাপটপগুলো ঠিক করে নিয়ে সেগুলো ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে দিতে পারি। এবং ক্ষেত্রবিশেষ স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়া যেতে পারে।
একদম বিনা মূল্যে ল্যাপটপগুলো দিয়ে দিলে এই প্রকল্পকে সেল্ফ-সাসটেইন্ড করা যাবে না। তার জন্য আমরাও চিন্তা করে দেখেছি, আমরাও ল্যাপটপগুলো স্বল্পমূল্যে বিক্রি করব। তাহলে বাজার থেকে পুরোনো ল্যাপটপ কেনা যেমন সহজ হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে সেই ল্যাপটপগুলো যথাযথভাবে পৌঁছানো এবং সাপোর্ট দেয়া যাবে।
আমরা যেহেতু একটি মিশন নিয়ে এই কাজটি করতে যাচ্ছি, আপনি চাইলে আপনার ল্যাপটপগুলো আমাদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দিতে পারেন। আমরা সেগুলোকে ঠিকঠাক করে, পরীক্ষা করে, তারপর ছাত্রছাত্রীদের কাছে পুনরায় বিক্রি করে দেব; তবে অবশ্যই স্বল্পমূল্যে।
আমরা ছাত্রছাত্রীদের বলেছি, যার যার ল্যাপটপ লাগবে তারা যেন আমাদের ওয়েবসাইটে এসে আবেদন করে। ইতোমধ্যেই ১৩ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছে। আমরা প্রথমেই এদের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব। এই প্রক্রিয়ায় আপনি যদি কিছুটা সাহায্য করতে পারেন, তাহলে অনেকটাই উপকার হবে। আমাদের কাজটা অনেক বেগবান হবে। পাশাপাশি আপনার কাছে ল্যাপটপ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য থাকলে সেটা দিয়েও সাহায্য করতে পারেন।