বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ রাজনীতির এক মহাকাব্য; এক অমর অনবদ্য সৃষ্টি। বাঙালির গর্বের ধন। সেদিন শ্বাসরুদ্ধকর ওই ভাষণ পুরো বাঙালি জাতিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অসীম সাহস ও মুক্তির স্বপ্নে জাগিয়ে তুলেছিল। বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসীর জন্য ওই ভাষণ এক অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ। দিন যত যাচ্ছে ততই ৭ মার্চের ভাষণের মহত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। ইতোমধ্যে এই অমূল্য ভাষণটি পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। একটি ভাষণ এমন করে একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনকে ত্বরান্বিত করতে পারে তা একাত্তরের ৭ মার্চের আগে বিশ্ববাসীর জানা ছিল না। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ এখনও উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের গহীনতম তলদেশে আছড়ে পড়ে। ১১০৮টি শব্দের সে কী মোহনীয় অনুরণন! বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় এমন স্বপ্নজাগানিয়া শব্দের গলনাধার '(ক্রুসিবল)' এর আগে কখনও দেখা গেছে বলে জানা যায় না।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ- এই শব্দ তিনটি উচ্চারণ করেছেন। কী অপূর্ব সেই বাক্য গঠন ও বাক্য বিন্যাস! প্রমিত ও প্রাকৃত শব্দমালা মিলেমিশে একাকার। শব্দের উচ্চারণ, লয়ের ওঠা-নামা এবং বিশেষ বিশেষ শব্দের ওপর বাড়তি জোর দেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধুর এই স্বতঃস্ম্ফূর্ত আবেগঘন ভাষণটি এমন শ্রুতিমধুর ও অনন্য হয়ে আছে আজ পর্যন্ত। একই সঙ্গে ভাষণটি গতিময়। যেন দ্রোহের আগুন ছড়ানো অসাধারণ একটি কবিতার পঙ্ক্তিমালা। তথ্য, যুক্তিবাদিতা, প্রশ্ন, খেদ, বিষণ্ণতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সংযম, হুঁশিয়ারি উচ্চারণ- একসঙ্গে এত বৈশিষ্ট্য ঠাঁই করে নিয়েছিল ওই কবিতায়। সেই কবিতা পাঠের সময় তার তর্জনীর হেলনি এবং অনন্যসাধারণ দেহভঙ্গি- সত্যিই দেখার মতো।