প্রথাগতভাবে সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনী বিতর্কের বিষয়বস্তু পররাষ্ট্রনীতি হলেও করোনা মহামারি, স্বাস্থ্যবিমা এবং নাজুক মার্কিন অর্থনীতির বাস্তবতায় পররাষ্ট্রনীতির আলাপ সামান্যই হয়েছে। স্বল্প পরিসরে উত্তর কোরিয়া, চীন আর ইউক্রেন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। নিকট অতীতে ও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি যুদ্ধের প্রধান কারিগর মার্কিনরা হলেও ট্রাম্প–বাইডেন শেষ বিতর্কে মধ্যপ্রাচ্যের কথা ছিল সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সঙ্গে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া ও ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে সৃষ্ট সংঘাত তো আছেই। অবিরত এসব সংঘাত, রাশিয়া ও তুরস্কের উত্থান এবং গত চার বছরের মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতা কাঠামোয় পরিবর্তনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই নির্বাচন। যদি বাইডেন এতে জয়লাভও করেন, পরিবর্তিত মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব ধরে রাখা কঠিন হবে।
২০১৫ সালের জুন মাসে প্রথম দফার নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই ট্রাম্প ভিন্ন আবহ তৈরি করেছিলেন। মেক্সিকো, মুসলিম ইস্যু এবং হিলারিসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। চারদিকে ঘৃণার বাণী ছড়িয়ে মার্কিন ভোটারদের মনে অন্যদের থেকে ভিন্ন আখ্যান গেঁথে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প কথা রেখেছেন। হোয়াইট হাউসে পাকাপোক্ত হয়ে প্রথমেই তিনি মার্কিনদের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ছলচাতুরী জনসম্মুখে আনেন। সেখান থেকে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অবয়ব বদলে দিচ্ছে। এসব ঐতিহাসিক পরিবর্তন বড় সময়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির গতিপথ বদলে দেবে। ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা ছিল এই পরিবর্তনের প্রথম প্রকাশ। ২০২০ সালে এসে শতাব্দীর চুক্তির নামে ইসরায়েল–ফিলিস্তিনের ‘দ্বিরাষ্ট্রিক’ ব্যবস্থাও তিনি বাতিল করেন। পরের ধাপে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকে স্বীকৃতি দেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আমিরাত, বাহরাইন ও সুদানকে রাজি করান। একই সঙ্গে সৌদিদের নিরাপত্তা মার্কিনদের ওপর নির্ভরশীল—এই ঘোষণা দিয়ে সৌদিদের আদতে একটি আজ্ঞাবহ শাসক হিসেবে চিনিয়ে দেন। একইভাবে সিরীয় কুর্দিদের দল পিকেকেকে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পাহারাদার হিসেবে উল্লেখ করে পিকেকের ব্যাপারে আদর্শিক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন।