মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সমাবেশে হামলা, আহত ১৫
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২০, ১০:৩২
.tdi_2_224.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_224.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});বাঁশখালীতে প্রয়াত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আয়োজিত সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় বাঁশখালীর পৌরমেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী এবং বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পিএস তাজুল ইসলামসহ ২৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে পুলিশ বাঁশখালী সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, আবুল কালাম, মিজানুর রহমান ও এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সাংসদের অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার (গতকাল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। এতে বাঁশখালীর বেশকয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শুরুর কিছু সময় পর হঠাৎ লাঠি-সোঠা ও লোহার রড দিয়ে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় সমাবেশ মঞ্চের মাইক, প্যান্ডেল ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিকদের উপরও চড়াও হন হামলাকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সিএমপি কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, বাঁশখালীর সংসদ সদস্যের অনুসারী ও সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছুদির ধরে বিরোধ চলছে। এর জেরে প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচিতে একপক্ষ হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তিনি জানান, এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জহির উদ্দীন মোহাম্মাদ বাবর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে বাঁশখালীর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে (৬৮)। তিনি সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন সাংসদের পিএস অধ্যাপক মো. তাজুল ইসলাম (৫২), ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল করিম শরীফ (৫২), বাঁশখালী পৌরসভার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মৌলভী আক্তার হোসেন (৩৫), পুঁইছড়ি ইউপি মেম্বার ফওজুল কবির প্রকাশ ফজু (৩৫), বাহারছড়া ইউনিয়নের মো. আবুল কালাম চৌধুরী (৩৭), কালিপুর ইউনিয়নের আবুল ছালেহ (৪৫), ১নং পুকুরিয়া ইউনিয়নে মাহাবুবুর রহমান (৪৫), পশ্চিম ডংড়া এলাকার হারুনুর রশিদ (৪৫), বাঁশখালীর সাংসদের আরেক এপিএস একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল (৩৭), শেখেরখিল গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান (২৭), বাহারছড়া ইউনিয়নের মৃত শাহ আলম চৌধুরীর ছেলে সেলিম উদ্দিন চৌধু্রী (৩৮), একই ইউনিয়নের মৃত শফিকুল আলমের ছেলে খোরশেদুল আলম (৩৬), মৃত মাহবুবুল আলমের ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (৩৫), সৈয়দ আহাম্মদের ছেলে মনজুরুল ইসলাম (৩৫), কালা মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০), জাফর আহম্মদের ছেলে এনামুল হক (২৭), পুকুরিয়া ইউনিয়নের মৃত আশরাফুজ্জামানের ছেলে আব্দুল মোমেন (৪৫), বৈলছড়ি গ্রামের মৃত মনির আহম্মদের ছেলে মো. সেলিম (৩৫), মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. হেলাল (৩৪), মৃত ননী গোপাল চক্রবর্তীর ছেলে দীপেস চক্রবর্তী, মো. মুন্সীর ছেলে মোজাম্মেল ও মৃদ দুলা মিয়ার ছেলে সৈয়দুল ইসলাম (৪৫), বাহাছড়া গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে নাছির উদ্দিন (৩৮), ৫নং কালিপুর ইউনিয়নের মোরশেদুর রহমান নাদিম (৩৮) ও বাঁশখালী পশ্চিম বাহারছড়া গ্রামের মৃত কনি মিয়ার ছেলে মনির উদ্দিন বাবু (৪০)। এ মামলায় আরও ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বাদী জহির উদ্দীন মোহাম্মাদ বাবর আজাদীকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এমপির (সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী) নির্দেশে পৌর মেয়র সেলিমুল হক, পিএস তাজুল ইসলাম, এপিএস এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানসহ ২০ থেকে ২৫ জন অতর্কিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। আমি নিজেই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ওপর এই ধরনের হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। মামলার এজাহারে প্রফেসর আবুল হোসেন মানিক, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল ইসলাম বেদু, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, জয়নাল আবেদীন, আবু শাহাদাত সায়েম, কামরুল হুদা পাভেল ও সোহানসহ আরও অনেকেই আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আছেন, বাঁশখালী সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, আবুল কালাম, মিজানুর রহমান ও এনামুল হক। জানা যায়, ১৫ আগস্টের ঘটনার প্রথম প্রতিবাদকারী প্রয়াত মৌলভী সৈয়দের ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ গত ২৬ জুলাই মারা যান। পরদিন বাঁশখালীতে নিজ বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তার দাফন করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজন মিলে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। এতে স্থানীয় সাংসদসহ তার অনুসারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার অভিযোগ উঠে। ওই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়া দাফনের ঘটনায় তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ জুলাই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এদিকে হামলার ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে জামালখান সড়কে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে কমান্ডার মোজাফফর আহমদ সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সকল পদ ও সংসদ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে গত ৩ আগস্ট বাঁশখালী পুঁইছড়ি ইউনিয়নে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন চলাকালে বাঁশখালী সাংসদের নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটেছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া গার্ড অব না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা সংবাদকর্মী ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন সাংসদ মোস্তাফিজের এক অনুসারী। মুক্তিযোদ্ধাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ: মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আয়োজিত সমাবেশে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড, জেলা কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটি। বিবৃতিতে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে বাঁশখালী পৌর সভা মেয়র শেখ সেলিমুল হকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সমাবেশে এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, হামলাকারীরা এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে ব্যানার ও শ্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা করে মাইক, প্যান্ডেল ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। হামলায় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বিবৃতিতে এ বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা হলেন- মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, জেলা সংসদের কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, ডেপুটি কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, মহানগরীর ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী ছৈয়দ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নঈম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা ও মহানগরী সংসদের সহকারী কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), আহমেদ হোসেন, বদিউজ্জামান, নাসির উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, মো. আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মৌলভী সৈয়দ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মাহমুদুল হক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সভাপতি পিনাকী দাশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজীশ ইমরান, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল ও সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল প্রমুখ। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের নিন্দা ও প্রতিবাদ : মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম রিপোটার্স ফোরাম, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ও ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি কাজী আবুল মনসুর এবং সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রব মাসুম এবং টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান। নেতৃবৃন্দ এ ধরনের নেক্কারজনক ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ফের সমাবেশ আজ : এ হামলার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটির উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।.tdi_3_acc.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_acc.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});