দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এ রিজিয়নের দেশগুলোর একসঙ্গে এগোনোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিভিন্ন দেশের বিশিষ্টজনেরা। বর্তমানে বিশ্ব যেখানে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চীন যেখানে নিজেদের আলাদা করে বিশ্বের কাছে পরিচিত করছে, তখন এ রিজিয়নের অন্য দেশগুলোর উন্নয়ন আটকে আছে নিজেদের আটকে রাখার মধ্যে।
এমটাই মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। রোববার (২৮ জুন) সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের আয়োজনে 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বায়ন ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে এমন চিত্রই। সকালে ১০ জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও শাস্ত্রীয় শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের বৈদেশিক ফেলো শুভ বসু। আলোচনায় অংশ নেন আমেরিকার ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ, বাংলাদেশ এলায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপের সদস্য এবং রাষ্ট্রদূত নাসিম ফিরদৌস, ইউনাইটেড স্টেট ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) এর পক্ষে ড. আদনান রফিকসহ অন্য ব্যক্তিবর্গরা।
আয়োজন পরিচালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। মূল প্রবন্ধে বক্তারা বলেন, চীন বিশ্বের মধ্যে বিশেষ করে এশিয়ার মধ্যে তার নিজেদের পণ্যের একটি মার্কেট তৈরি করেছে। তার একটি বড় জনবল কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অন্য দেশের সঙ্গে নিজেদের সংযোগ বাড়িয়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পেও কাজ করছে এ দেশটি। সার্বিক বিবেচনায় বিশ্বে এখন বৃহৎ একটি ভূমিকা পালন করছে দেশটি। কিন্তু এ বিয়ষগুলো দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। ফলে কোনো একটি দেশ বেশি এগিয়ে যাচ্ছে আবার কোনো কোনো দেশ সেভাবে এগোতে পারছে না বা পিছিয়ে পড়ছে। আলোচনায় বক্তারা বলেন, এ রিজিয়নের মধ্যে বর্তমানে নিজেদের যোগাযোগ কমে গেছে অনেক বেশি।
সার্ক তো মোটামুটিভাবে মারা গেছে, এটাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে। চীন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের অগ্রগতিটা চোখে পড়ার মতো। আমাদের নিজ রিজিয়নের দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি সংযোগ ঘটানো প্রয়োজন। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। একইসঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে অন্য সাধারণ বিষয়েও। তারা বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একটা হলো স্ট্রাকচারাল প্রবলেম। এর ফলে পলিটিক্যাল বিষয় আমাদের গঠনগতভাবে আলাদা করে রাখে। অপরটি ফাংশনাল প্রবলেম। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, পর্যটন আমরা সবকিছুই আমাদের নিজেদের মতো করে দেখতে চাই। বক্তারা বলেন, এটা ঠিক যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এসে বলে যে আমরা দেশকে নতুন করে সাজাতে চাই, কিন্তু আসলে সেটা হয় না। আমরা আমাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ করে থাকি, তবে সব থেকে বড় বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া।
সবারই একসঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে কাজ করলেই সাফল্য আসবে। শুধু রিজিয়নভাবে নয়, বরং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই পরিপ্রেক্ষিতে এগোতে হবে বলেও এসময় মতামত দেন আলোচকরা। তারা বলেন, চীন এটাই করেছে এবং এগোতে চেয়েছে বলেই আজ তারা এভাবে এগিয়ে। আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে রিজিয়ন কোন দিকে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সম্প্রীতি আরও বাড়ানো উচিত। আমাদের সবার আগে এটা ঠিক করতে হবে যে, ভবিষ্যতে আমরা নিজেদের কোথায় দেখতে চাই এবং সেভাবেই এগোতে হবে। একইসঙ্গে দেশগুলোর একসঙ্গে এগোনোর কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা। এ বিষয়ে বক্তারা বলেন, সাইথ এশিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়।