প্রায় তিন মাস স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী অপূর্ব। লকডাউনের শুরুর দিকে অসুবিধা না হলেও এখন যতই দিন যাচ্ছে, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি। এখনো শুটিং শুরু করেননি অপূর্ব। এই পরিস্থিতিতে শুটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতেও পারছেন না। তবে ঈদে দর্শকদের সঙ্গে থাকতে চান তিনি।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কয়েকটি কাজ করার ইচ্ছা আছে। নিজের কাজ, ছোট পর্দার সিন্ডিকেটসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন এই জনপ্রিয় টিভি তারকা কেমন আছেন? শারীরিকভাবে ভালো আছি। তবে মানসিকভাবে খুব একটা ভালো নেই। এই পরিস্থিতিতে মনে হয় কারও মানসিক অবস্থা ভালো থাকার কথা না। তিন মাস ধরে স্রেফ ঘরে বসা। এর একটা প্রভাব মনের ওপর পড়ছে। কেমন প্রভাব? অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন? ঘরে বসে থাকতে থাকতে মস্তিষ্ক অনেকটা অলস হয়ে গেছে। আগের অনেক কিছুই মনে পড়ছে না। মনে করার চেষ্টা করলেও অনেক সময় মনে করতে পারি না। ঘুম, খাওয়াদাওয়া সবকিছুর নিয়ম এলোমেলো হয়ে গেছে। আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম।
শুটিং, শুটিংয়ের মিটিং এসব নিয়ে সময় কাটত। এখন তো কিছুই নেই। সেই ১৮ মার্চ ঘরে ঢুকেছি। সেই থেকে ঘরেই বসা। ঘরের সময় কাটছে কীভাবে?ছেলে আয়াশকে নিয়ে গেম খেলি। বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনে গেম খেলা হয়। তাদের সঙ্গে ফোনে আড্ডা হয়। প্রতিদিনই নিজের গাড়ির যত্ন নিই। কারণ, গাড়ি নিয়ে তো এখন বের হই না, ব্যাটারি বসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এক–দুদিন পরপর বাসার সামনে একটু চালাই। এ ছাড়া প্রতিদিন রাতেই সিনেমা দেখি।
কী কী সিনেমা দেখলেন? হলিউডের ছবিই বেশি দেখা হয়। পুরোনো দিনের ব্লকবাস্টার হিট কিছু ছবি দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ‘ডন আনলিমিটেড’, ‘মিশন ইম্পসিবল’ সিরিজগুলো দেখলাম। বেশ কিছু হরর মুভিও দেখলাম। এখন ‘ফ্রেন্ডস’ সিরিজের সিজন ফোর দেখছি। সিরিজটি দেখতে বসে বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছে। তাদের খুব মিস করছি। ঈদুল ফিতরে আপনার কতগুলো নাটক প্রচারিত হয়েছিল? গুনে দেখিনি। তবে ২০–২২টা হবে। এগুলো ঈদের নাটক ছিল না। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল ও টেলিভিশনে সাধারণ সময়ে প্রচারের জন্য তৈরি করা ছিল।
করোনার কারণে ঈদের কাজগুলো করতে পারিনি। ঈদের জন্য শিডিউল দেওয়া ছিল ২২ মার্চ থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার কারণে ১৮ মার্চ আমি ঘরে ঢুকে গেছি। ঈদের শুটিং করাই হয়নি। সেই নাটকগুলোর সাড়া কেমন? ভালো সাড়া পেয়েছি। এখনো পেয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে ‘হঠাৎ দেখা’, ‘ভালোবাসা তুমি আমি’, ‘বিয়ে’, ‘রুদ্র আসবে বলে’, ‘অ্যারেঞ্জ লাভ’ এ নাটকগুলো দর্শকদের ভালো লেগেছে। সামনের ঈদে কী হবে? বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবছি। কারণ, পরিস্থিতি ভালো না হলে কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। জুন মাসে কোনো কাজ করছি না। জুলাই মাসটা পর্যবেক্ষণ করব। পরিস্থিতি বুঝে জুলাইয়ের মাঝামাঝি কাজের পরিবেশ ভালো লাগলে ঈদের কিছু কাজ করা যাবে।
যদি ঈদের আগে দুই সপ্তাহও সময় পাওয়া যায়, তাহলে ঈদের জন্য চার-পাঁচটা কাজ করতে পারব। তাতে অন্তত আমার ভক্ত-দর্শকেরা খুশি হবেন। ছোট পর্দার বেশ কজন তারকার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে কাজ করার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। আপনার নামও আছে তাঁদের মধ্যে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? আমাদের চারজন অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে এই ‘সিন্ডিকেট’ কথাটা আমার কানেও এসেছে। তবে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আমিসহ যে শিল্পীদের নিয়ে সিন্ডিকেট করার কথা বলা হচ্ছে, আমরা কেউই এভাবে কাজ করি না। শিল্পী নির্ধারণের দায়িত্ব প্রযোজক, পরিচালকের। এই কাজটা তো শিল্পীরা করেন না। আর এই চারজন তো শুধু চারজনের সঙ্গেই কাজ করেন না। সহশিল্পী হিসেবে অন্যদের সঙ্গেও অনেক কাজ করেন।
তাহলে সিন্ডিকেট নিয়ে নাট্যাঙ্গনে আলোচনা হয় কেন? আমার জানামতে ইন্ডাস্ট্রির কিছু জুনিয়র পরিচালক, শিল্পী হিংসা থেকে এসব আলোচনা করেন। এর কারণ অনেক সময় দেখা যায়, নতুন পরিচালকেরা যেকোনো কারণে হোক আমাদের শিডিউল পান না। তখন তাঁদের ক্ষোভ তৈরি হয়। ধরুন শিহাব শাহিন ভাইদের মতো যেকোনো একজন ভালো নির্মাতা শিডিউল চাইলেন, একই সময়ে একজন নতুন নির্মাতাও শিডিউল চাচ্ছেন, আমি একজন অভিনেতা হিসেবে ভালো কাজের আশায় শিহাব শাহিন ভাইকেই শিডিউল দেব।
তখন ওই নতুন পরিচালক মন খারাপ করে কষ্ট পেয়ে বাইরে গিয়ে রটাবে আমি সিন্ডিকেট করছি। বেশ কিছু দিন ধরে এমনটিই হচ্ছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ওই নতুন পরিচালক নিজেই প্রকৃত চিত্রটা বোঝেন। তারপরও এমন আজগুবি আলোচনা করা ঠিক না। এটি একধরনের ছেলেমানুষি। আরেকটা ব্যাপার আছে, অনেক সময় নতুন জুনিয়র পরিচালকের কাছে কোনো কোনো প্রযোজক শর্ত বেঁধে দেন অপূর্ব, নিশো, মেহজাবিন ও তিশা জুটির শিডিউল পাওয়া গেলে কাজ দেবেন। খালি না থাকলে অনেক সময় আমরা শিডিউল দিতে পারি না। তখন ওই পরিচালকের কাজটি হাতছাড়া হয়ে যায়। তখন আবারও সিন্ডিকেট শব্দটি উচ্চারিত হয়। আপনারা শুটিংয়ে যাচ্ছেন না, আপনাদের কারণে স্বল্প আয়ের শিল্পী, কলাকুশলীরা বেকার হয়ে আছেন।