করোনাকালে মানুষ যখন গৃহবন্দী, তখন বিভিন্ন জনপদে হঠাৎ হঠাৎ বন্য প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়েছে। যেটা চোখে পড়েনি, সেটা হচ্ছে গত চার মাসে বিশ্বে তো বটেই বাংলাদেশেও বন্য প্রাণী নিধন বেড়েছে। দুনিয়াজুড়ে আরও বেড়েছে বনের বিনাশ।
এই সেদিন ভারতের কেরালায় অন্তঃসত্ত্বা একটি হাতি মানুষের নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছে। বন বিভাগের হিসাবে বাংলাদেশে অন্য সময়ের চেয়ে গত চার মাসে বন্য প্রাণী হত্যা বেশি হয়েছে। আর বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) এক জরিপ বলছে, গত মার্চে দুনিয়াজুড়ে বন বিনাশ বেড়েছে দেড় গুণেরও বেশি।
করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম–গুলোতে ফলাও করে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায় শহরে পেঙ্গুইনের হাঁটাহাঁটি, ভারতের সিকিমে জনবসতির চৌহদ্দিতে গন্ডারের আনাগোনা, অথবা ইতালির ভেনিসে বিলুপ্তিপ্রায় হাঁসের দল দেখা যাওয়ার মতো ঘটনাগুলোর খবর। পরিবেশপ্রেমীরা কার্বন নিঃসরণ কমে বাতাস নির্মল হওয়ায় উদ্বেলিত হয়েছেন।
অথচ এর উল্টো পিঠেই বেড়েছে বন ও বনের প্রাণী বিনাশের তৎপরতা। ডব্লিউডব্লিউএফ গত মে মাসের শুরুতে বন-অধ্যুষিত ১৭টি দেশের বনভূমির ওপরে লকডাউনের প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি বলছে, গত মার্চে পৃথিবী থেকে সাড়ে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার বন উধাও হয়ে গেছে।
সংস্থাটির আরেকটি তড়িৎ জরিপ অনুযায়ী বন্য প্রাণী হত্যার প্রবণতাও অতীতের চেয়ে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এ রকম কোনো জরিপ হয়নি। তবে বন্য প্রাণী গবেষকেরা বলছেন, গত তিন মাসে দেশে অন্তত ২০টি ঘটনায় এক শর মতো বন্য প্রাণী হত্যার কথা গণমাধ্যমে এসেছে।
আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদারীপুরের শিবচরে বিষ দিয়ে ১২টি বানর হত্যা, চট্টগ্রামের হালদা নদী ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৯টি ডলফিন হত্যা এবং সিলেটের জৈন্তাপুরে আটটি শিয়াল ও দুটি বনবিড়াল হত্যা।
আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের বাংলাদেশীয় পরিচালক রাকিবুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কালে দেশে বন্য প্রাণীর প্রজনন ও বিচরণ বেড়েছে। একই সঙ্গে তাদের হত্যাও বেড়েছে। তাঁর মতে বনজীবী জনগোষ্ঠীর সাহায্যে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষার উদ্যোগ জোরদার করা দরকার।