ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী স্বজনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২০, ২১:৪২
‘২৭ মে। রাত আনুমানিক ৯টা ৩৫। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের এসির কক্ষের এসি থেকে সামান্য ধোঁয়া বের হতে দেখি। ওই সময় বাইরের কক্ষের মূল দরজা খোলা ছিল। সেখানে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ ৬-৮ জন দায়িত্বরত ছিলেন। তবে কোনো গার্ড ছিল না। এসি থেকে ছোট স্পার্ক হয়ে এসির গায়ে সামান্য আগুন লেগে যাচ্ছিল। আমি চিৎকার করে ওয়ার্ডবয়কে বলি ফায়ার ইস্টিংগুইশার নিয়ে আসেন। আগুন নেভান। ওয়ার্ডবয় বলেন- ফায়ার ইস্টিংগুইশার নেই। এরপর সে নিজে নিজে ফ্লোর মোছার মপ (যা অতিমাত্রায় দাহ্য পদার্থ মিশ্রিত ছিল) দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। মপের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন আরও বেড়ে নিয়ে এসির বডি গলতে শুরু করে। তখন এসির রেখে দেওয়া খালি মুভেবল বেডটি সরানোর অনুরোধ করি। যাতে বেডের চাদরে আগুন লাগতে না পারে। এরই মধে এসির প্লাস্টিকের ছোট ছোট পোড়া অংশ বিছানার চাদরের ওপর পড়তে থাকে। এরপর চাদরে আগুন ধরে যায়। বেডের চাদরে আগুন লাগা দেখে চিকিৎসক, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়রা সব রোগীর মুভেবল বেডসহ তাদের সরানোর চেষ্টা না করেই পেসেন্ট কক্ষের দরজা না খুলে তারা যে যার যার মতো সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপরই মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমি দৌড়ে সিকিউরিটি গার্ড রুমে যাই। সেখানে কোনো ফায়ার ইস্টিংগুইশার না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে আগুনের ঘটনা জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস পাঠানোর অনুরোধ করি। ১০-১৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস আসে। ১০-১৫ মিনিটের চেষ্টায় দশটা পাঁচ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আমার শ্বশুড় মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনী পলসহ (৭৪) পাঁচজন রোগী আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়।’
এ্যান্থনীর ছেলের স্ত্রী রোনাল্ড মিকি গমেজ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তার চোখের সামনেই আগুনে পুড়ে পাঁচজন রোগী দগ্ধ হন।
মামলার এজাহারে তিনি বলেন, করোনা আইসোলেশন ইউনিটের পেসেন্ট কক্ষে কোনো ফায়ার এক্সিট ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেসেন্ট বের করার কোনো উদ্যোগ নেননি। দরজা বন্ধ থাকায় শ্বশুড়কে উদ্ধার করতে পারি নাই। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ শ্বশুড়কে বের করার জন্য কোনো সহযোগিতা করেনি। তারা সহযোগিতা করলে শ্বশুড়কে বাঁচানো যেত।