‘সোনারে বাঁচাতি ভিটে বাড়ি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা দিতি চাইছিলাম’

কালের কণ্ঠ প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২০, ১৩:২৯

‘আমার সোনারে বাঁচাতি ভিটে বাড়িটুকুও বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা দিতি চাইছিলামরে। ওদের কাছতে ১ তারিক পইরযন্ত টাইম আমরা নিলাম রে আল্লা। সে সুমায় দিলনারে আল্লা। আমার সুনারে ছাইড়ে আমি কি কইরে থাকপোরে আল্লা। আমি এগের বিচার চাই আল্লা। তুমি এগের বিচার কইরো আল্লা।’ লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে নিহত যশোরের রকির বাড়িতে আজ শনিবার সকালে ঢোকার মুখেই তার মা মহিরুন নেছার এমন হৃদয়বিদারক আহাজারি কানে আসে।

লিবিয়ায় গত বৃহস্পতিবার অপহরণকারীদের হাতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির একজন রকিবুল ইসলাম রকি। সংসারে সচ্ছলতা আনতে মাত্র ২০ বছর বয়সে মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিল লিবিয়ায়। ভিটে-বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করে ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দালালের মাধ্যমে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ছেড়েছিল ছেলেটি। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে তাদের বুকে এখন কান্নার সাগর। এখন তারা অন্তত রকির লাশটা ফেরত চান।

লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার গুলিতে নিহত রকি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ১০ নম্বর শংকরপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম খাটবাড়িয়ার ঈসরাইল হোসেন দফাদারের ছোট ছেলে।

আজ শনিবার সকালে রকিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিন শেডের ঘরের সামনে উঠোনে হাউমাউ করে কাঁদছেন রকির মা মাহিরুন নেছা। তাকে ঘিরে বসে অন্য স্বজনদের চোখেও পানি। কাঁদতে কাঁদতে মাহিরুন নেছা আহাজারি করছেন। পাশেই একটি চেয়ারে রকির বাবাকে বসিয়ে রেখেছেন কয়েকজন স্বজন। প্রিয় ছোট সন্তান হারিয়ে শোকে নির্বাক পাথর তিনি। কাঁদতেও যেন ভুলে গেছেন। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে আপন মনে কি যেন বলছেন।

বাড়িতে কথা হয় রকির শোকার্ত বড় ভাই সোহেল রানার সাথে। তিনি জানালেন, তারা চার ভাই বোন। রকি সবার ছোট। সে যশোর সরকারি সিটি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষে পড়া অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। ভিটে-বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করে ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে দালালের মাধ্যমে ভাইকে লিবিয়ার ত্রিপোলি পাঠানো হয়। তার এক আপন চাচাতো ভাইও থাকেন লিবিয়ার ত্রিপোলিতে। সেখানেই তার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দালাল তাকে ত্রিপোলিতে নিতে পারেনি। সে যে বিমানে গিয়েছিল সে বিমান বেনগাজিতে নামে। আবার যুদ্ধের কারণে তাকে দালাল তাকে সেখান থেকে ত্রিপোলিতে নিতে পারছিলেন না। এজন্য সে বেনগাজীর একটি তেল কোম্পানিতে কাজ নেয়। সেখানে ২ মাস কাজ করা অবস্থায় পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি দালালের সাথে। তার মাধ্যমে বাংলাদেশি টাকায় ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় বেনগাজী থেকে ত্রিপোলীতে চাচাতো ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার। সে অনুযায়ী ১৫ মে সে দালালের সাথে বেনগাজী থেকে রওনা হয় ত্রিপোলির উদ্দেশে। পথে ত্রিপোলীর কাছাকাছি মিজদাহ নামক স্থানে ১৭ তারিখ তারা অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হয়। ১৮ তারিখ সন্ধ্যর দিকে সোহেল রানার কাছে বাংলাভাষী একজন ফোন করেন। সেই ব্যক্তি নিজের পরিচয় না দিয়ে রকির মুক্তির জন্য ১২ হাজার ইউ এস দলার অথবা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় অপরহরণকারীরা সোহেল রানার সাথে রকির কথা বলায়। রকি সোহেলকে জানায় তাকেসহ অন্য জিম্মিদের অপহরণকারীরা খুব নির্যাতন করছে। এবং টাকা না দিলে তাকেসহ অন্যদের হত্যা করা হবে। এরপর প্রতিদিনই অপহরণকারীরা রকিকে নির্যাতন করে সোহেলের কাছে টাকার দাবিতে ফোন করাতেন এবং দুবাইয়ের একটি একাউন্টে টাকা জমা করতে বলতেন। এক পর্যায়ে রকির পরিবার ১০ লাখ টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। এজন্য তারা জুনের ১ তারিখ টাকা দেয়ার সময় নিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us