‘এই বনই তো আমাগো বাঁচাইয়া রাখছে। বনটা না থাকলে আরও কয়বার যে ভাসতে হইতো! কে জানে।’ সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের মুখে সব হারানো ক’জন প্রবীণ মানুষ এভাবেই ম্যানগ্রোভ বনের সুরক্ষা দেয়ালের কথা তুলে ধরছিলেন। বললেন, এই বন তো আমাদের আগলে রাখে। বড় বড় ঝড়ঝাপটা আমাগো গায়ে লাগার আগে বনের গায়ে লাগে। কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখ মুছতে থাকেন নব্বই পেরোনো আবদুল কাদের মাল। সেদিনের ছবি যেন তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছিল। কথা বলতে গিয়ে সেদিনের দৃশ্যপট এঁকেছিলেন চোখের সামনে।
বয়সের ভারে ন্যূয়ে পড়েছেন আবদুল কাদের মাল। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের সময় তখন চল্লিশের টগবগে যুবক তিনি। অল্পদিন আগেই বিয়ে করেছিলেন। ঘরে এসেছিল এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান। সত্তরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়ে সব গিয়েছে এলোমেলো হয়ে। গাছের ডালপালা ধরে প্রবল বাতাস আর তুফানের সঙ্গে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি। পারেননি স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে। তবে রক্ষা পেয়েছে নিজের জীবন। সেই মহাপ্রলয় থেমে যাওয়ার পর জীবন শুরু হয় আবার নতুন করে; একদম শুন্য থেকে। গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখা তার সাথে। রাস্তার মোড়ের দোকানের সামনে আলাপ নানান বিষয়ে। উদোম শরীর; কোমড়ে বাঁধা নীল চেক গামছা। কথা বলার সময় দু’হাতে ঘটনার তীব্রতা বোঝানোর চেষ্টা করলেন।