'লাশের কথা জানিয়ে টেলিফোনে ম্যাসেজ পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় কাজ। লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমরা যখন ঘরে ফিরি তখন নিজেরাই বুঝতে পারি না জীবিত আছি কি না। সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমাসহ পুরো পোশাক পরে গরমের মধ্যে কাজ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। দমবন্ধ হয়ে আসে একেক সময়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে রাজধানীর তালতলা কবরস্থানে কবর দেওয়া পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও কাছে আসেন না ভয়ে। তবে আমরা ভয় পাই না। এই মৃত ব্যক্তিরা তো আমাদেরই কারও না কারও স্বজন।' কোভিড ১৯ (করোনা) এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ সৎকার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে টেলিফোনে কথাগুলো বললেন ২৪ বছর বয়সী জারিফ কারির। তিনি কোভিড ১৯ আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত বেসরকারি সংস্থা রহমতে আলম সমাজ সেবা সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী। অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে জারিফ কারির বললেন, একদিনে তিনটি লাশের সৎকার করতে দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত লাগে। ঢাকা মেডিকেলের মর্গের ভেতরের যে অবস্থা তা তো অবর্ণনীয়। এক মৃত ব্যক্তির ছেলে হাসপাতালে এলেও জানাজায় অংশ নিতে চাননি। আরেক মৃত ব্যক্তির ছোট ভাই জানিয়ে দেন তিনি কোনো অবস্থাতেই হাসপাতালে আসবেন না। কয়েকটি ঘটনায় কোনো স্বজনকেই পাওয়া যায়নি। মৃত ব্যক্তির হাসপাতালের কাগজপত্র তৈরি না থাকলে পিপিইসহ অন্যান্য পোশাক পরে বসে থাকার সময় আরও বাড়তে থাকে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামিয়ে দিয়ে দলের সবার পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক আগুনে পুড়িয়ে দিয়েই পরে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়। তবে জারিফসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন না, থাকছেন সংস্থার নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গায়।