ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ভোটার ভোট দেননি—এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের অনেকের মধ্যে হা-হুতাশ শুরু হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। এই নির্বাচনের সঙ্গে বিরাজনৈতিকীকরণ বা নির্বাচনে জনগণের আস্থা হারানোর বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য কতটা ক্ষতিকর, এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।আমাদের এক সাংবাদিক বন্ধু ফেসবুকে প্রশ্ন করেছেন, ভোটের হার কমার কারণ অনুসন্ধান করবে কি রাজনৈতিক দলগুলো? তাঁর এই প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারলাম, তিনি চাইছেন ভোটাররা কেন ভোট দিতে এলেন না, তা রাজনৈতিক দলগুলো অনুসন্ধান করে দেখুক, এ নিয়ে গবেষণা করুক। উন্নত বিশ্বের বাস্তবতা জানি না, তবে বাংলাদেশে মানুষ কেন ভোট দিতে যাচ্ছে না বা আগ্রহ হারিয়েছে, তা নিয়ে আদৌ কোনো গবেষণার দরকার আছে কি? গত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতাই কি একজন ভোটারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট নয়? যে কায়দায় নির্বাচনগুলো হয়েছে, তাতে মানুষের মনে এই ধারণা হওয়াই তো স্বাভাবিক যে তাঁদের ভোট দেওয়া না–দেওয়ায় আসলে কিছু আসে–যায় না। যে দলকেই সমর্থন করুক, বাংলাদেশের মানুষের রাজনীতির প্রতি আগ্রহের মাত্রা ‘অতি’ বলেই বিবেচিত হয়ে আসছিল। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৩ সালের এক জরিপে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি রাজনীতি-সক্রিয় জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি পেয়েছিল। সেই জরিপের তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ ‘উচ্চ মাত্রায়’ ও ২৯ শতাংশ মানুষ ‘মধ্যম মাত্রায়’ রাজনীতিতে সক্রিয়। সংখ্যা দুটো যোগ করলে বলা যায়, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৯০ ভাগের বেশি মানুষ কোনো না কোনো মাত্রায় রাজনীতিতে সক্রিয়। যে সময়ে এই জরিপ হয়েছিল, তার প্রায় সাত বছরের মাথায় ঢাকা শহরের দুই অংশে একটি নির্বাচনে আমরা দেখলাম, ৭০ ভাগের বেশি মানুষ ভোট দিতে যাননি। এই হিসাব নির্বাচন কমিশনের। অনেকের মতে এই হার আরও বেশি। গত সাত বছরে দেশে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের বেশ কিছু নির্বাচন হয়েছে। এগুলো বিবিধ বিশেষণ পেয়েছে। কোনোটি ‘একতরফা’, কোনোটি ‘নিয়ন্ত্রিত’, আবার কোনোটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে সুবিখ্যাত। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে জনগণের রাজনীতি-সক্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে যে উপাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা হচ্ছে নির্বাচন।