একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এখন মৌলভীবাজার জেলা ও সিলেটজুড়ে চলছে সরগরম আলোচনা-সমালোচনা। ভক্ত, অনুসারী ও সর্মথকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। সম্প্রতি কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজের একটি বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশ-বিদেশে নানাজন তার ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলন ও কাউন্সিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন তিনি। জানা যায় গত রোববার কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ গণফোরাম থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে ‘জাতীয় বেঈমান’ ও বিকল্পধারা থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া সাবেক (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য এমএম শাহীনকে ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যায়িত করেন। ওই বক্তব্যের পর সুলতান সমর্থকদের ব্যাপক সরব প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলে। তবে এ বিষয়ে এমএম শাহীনের পক্ষে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি। অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শরিক দল বিকল্পধারার নেতা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এমএম শাহীন। তবে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না বর্তমান সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। গতকাল এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি বলেন- আমি কি এবং কে আমার সংসদীয় এলাকার জনগণসহ সারা দেশের মানুষই জানেন। এ রকম গুরুত্ব ও মূল্যহীন বিষয়ে কথাবার্তা সময় অপচয়ের নামান্তর। আমার রাজনৈতিক জীবনের অতীত ও বর্তমান দেশবাসীর জানা। সুতরাং ব্যক্তি স্বার্থে ফায়দা হাসিলে কে কি বললো সেটি আমি কখনো গুরুত্ব দেই না। আমি কারো দেয়া সার্টিফিকেটে রাজনীতিতে আসিনি। আমার ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাসের অপর নাম হচ্ছে জনগণ। জনগণের ভালোবাসাই আমার রাজনীতির প্রেরণা। আর ওই জনগণই রাজনৈতিক নেতাদের সার্টিফিকেট দেন। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন- আমার রাজনীতির সার্টিফিকেট দেয়ার অধিকার জনগণের। গত নির্বাচনে জনগণই সার্টিফিকেট দিয়েছেন আমি কে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে একে-অন্যের বিষয়ে অনেক কথাই বলেন। এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে এমএম শাহীনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে ইঙ্গিত করে বলেন, যাকে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়ে তুলেছেন তিনি বেঈমান মুনাফিকদের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে (সুলতান মনসুরকে) ছাত্রলীগের সভাপতি, ডাকসু’র ভিপি, এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছেন। অথচ তিনি সংগঠনের নেতাদের বুকে ছুরি মেরে অন্য দলে গিয়েছেন। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগে এমন বেঈমানের কখনো ঠাঁই হবে না। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এমএম শাহীনকে ইঙ্গিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কয়েক বছর আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তখন তার (এমএম শাহীন) এর মালিকানাধীন সেখানকার একটি পত্রিকায় (মানব ঠিকানা) প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন হয়েছিল। তবে আজ সেই লোক সম্মেলনে বক্তব্য দিলেন। অথচ আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের অনেক পরীক্ষিত নেতা এই সভায় বক্তব্য দিতে পারলেন না। তাই সব নেতাকর্মীর এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। দলের বৃহত স্বার্থে সময়ের কোকিল এসব বহিরাগত সুবিধাভোগীকে রুখতে হবে। তার এমন বক্তব্যের পর তাদের ভক্ত সমর্থকরা সরব হয়ে ওঠেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।