রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনে ভেরিফাইড পুলিশ সদস্যদের অনিয়ম ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুলিশের এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু করা হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। দুদকের সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তৈরি একটি এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন গত ১৯শে সেপ্টেম্বর দুদক মহাপরিচালকের (প্রশাসন) কাছে পাঠানো হয়েছে। এনফোর্সমেন্টের নেতৃত্বে থাকা দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।রতন কুমার দাশ বলেন, রোহিঙ্গারা কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে, কোন প্রক্রিয়ায় তারা পাসপোর্ট তৈরি করছে, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছি। অভিযানে পাসপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনে ভেরিফাইড পুলিশ সদস্যদের অনিয়ম ও আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে রোহিঙ্গাদের ছাড় দেয়ার তথ্য পেয়েছি। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত, আমরা তাদের আইনের আওতায় আনতে চাই। এজন্য আমরা দুদক মহাপরিচালকের (প্রশাসন) কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। শিগগিরই ওইসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করবো।তিনি জানান, সমপ্রতি পাসপোর্ট নিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এরমধ্যে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী তিন রোহিঙ্গা তরুণকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানার এ কে খান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা দালালের মাধ্যমে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট তৈরি করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এর আগে গত ১লা সেপ্টেম্বর পাসপোর্টসহ ধরা পড়েন নজির আহমদ নামে এক রোহিঙ্গা। সৌদি আরব যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এরও আগে পাসপোর্ট করতে গিয়ে নজিরের স্ত্রী রমজান বিবি আটক হন। লাকি আক্তার নাম দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন ওই নারী।এসব ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসার পর নগরীর মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে দু’দফায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায় দুদক টিম। এ সময় নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তারা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পায়। এরপরই এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক টিম।এনফোর্সমেন্টের সদস্য দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, দু’টি পাসপোর্ট অফিসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে আমরা সন্দেহভাজন ১৫০টি পাসপোর্ট আবেদন সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৩৫ আবেদনকারী রোহিঙ্গা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এই আবেদনগুলো কোন পুলিশ কর্মকর্তা ভেরিফিকেশন করেছেন তাদের খুঁজে বের করবো। এনফোর্সমেন্ট অভিযানে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও এনআইডি পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কর্মচারী, পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিবসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।তিনি জানান, দুদকের অভিযানের পর নির্বাচন কমিশন রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেয়ার কাজে জড়িত চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা অফিসের সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সহায়ক মোস্তফা ফারুককে ১৯শে সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নগরীর কোতোয়ালি থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলাও করা হয়েছে। এ মামলার রিমান্ডে জয়নাল আবেদীন ও মোস্তফা ফারুক রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেয়ার কাজে জড়িত নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অনেকের তথ্য দিয়েছেন। পুলিশকে দেয়া তথ্য এবং এনফোর্সমেন্টের অভিযানে পাওয়া তথ্য ধরে দুদক কাজ করছে। নির্বাচন কর্মকর্তা, ভেরিফাইড পুলিশ, পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সচিবসহ কেউ রেহাই পাবে না বলে জানান দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন।