ছবি সংগৃহীত

কিছু হতে পারি নাই বলেই কার্টুনিস্ট হয়েছি: মোরশেদ মিশু

আমি ভাই বর্তমানে বাঁচি। ভবিষ্যত নিয়া দুশ্চিন্তা করার চেয়ে প্রতি মূহুর্ত উপভোগ করে বেঁচে থাকাটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এম. রেজাউল করিম
প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৩১ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৮
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৩১ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৮:৪৮


ছবি সংগৃহীত

মোরশেদ মিশুর ছবিটি একেছেন নাশাদ এনডি।

(প্রিয়.কম)  ছোটবেলায় মেজো ভাইয়ের সাথে কমিকস পড়া শেষে একসাথে বসে সেখানে থাকা কার্টুনগুলো অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন। সেখান থেকেই আকাআকির হাতেখড়ি। দেখতে দেখতে কমিকস পড়া সেই ছেলেটাই এখন কার্টুন আকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জনপ্রিয় রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।  তবে নিজেকে এখনও নিতান্তই সাধারণ ভাবেন এই কার্টুনিষ্ট। তাইতো তিনি বলেছেন, আর কিছু হতে পারি নাই বলেই কার্টুনিস্ট হয়েছি।

বলছিলাম তরুণ প্রজন্মের মেধাবী কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু'র কথা। সম্প্রতি প্রিয়.কমের সাথে আলাপকালে নিজ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন তিনি। 

মোরশেদ মিশু। ছবিঃ সংগৃহীত।

তিনি বলেন, ছোটবেলায় বড় ভাইয়ের সাহচর্যেই আঁকাআঁকিতে তার হাতেখড়ি। পরবর্তীতে বন্ধু আল নাহিয়ানের সুবাদে ফান ম্যাগাজিন 'উন্মাদ'-এর আহসান হাবীবের সাথে পরিচয় হয়। কার্টুন আঁকায় আগ্রহ দেখে আহসান হাবীব আমাকে উন্মাদে আঁকা শুরু করতে বললেন। তার অনুপ্রেরণাতেই ২০১২ সাল থেকে 'উন্মাদ' ম্যাগাজিনে আমার কার্টুন আঁকা শুরু।  আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনও উন্মাদে কার্টুন আঁকা।

তবে তরুণ এই কার্টুনিষ্টের প্রথম আয় কিন্তু অন্য স্থান থেকে। কার্টুন আকার পাশাপাশি ভালো কবিতাও লিখেন মোরশেদ। তার জীবনের উপার্জন ছিলো কবিতা লিখে ১০০ টাকা পাওয়া।

কর্মস্থলে কার্টুন আঁকারা ব্যস্ততা। ছবিঃ সংগৃহীত।

বর্তমানে উন্মাদ, কার্টুন, ওয়াল আর্ট আর কার্টুন পিপল নিয়েই তার ব্যস্ততা। উন্মাদের পাশাপাশি কাজ তিনি করছেন দৈনিক যুগান্তর, ডেইলি বাংলাদেশ টুডে, সাপ্তাহিক ২০০০, অন্যরকম গ্রুপ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করতেই মোরশেদ বলে ঊঠেন, আমি ভাই বর্তমানে বাঁচি। ভবিষ্যত নিয়া দুশ্চিন্তা করার চেয়ে প্রতি মূহুর্ত উপভোগ করে বেঁচে থাকাটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সম্পর্কে কোন সিক্রেট কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ভাই খোলা বইয়ের মত।  আমার বন্ধুরা আমার সম্পর্কে সব জানে। আর কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই আমি বলে দেই। আমার কোন সিক্রেট টিক্রেট নাই। 

কাছের বন্ধুদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার স্কুল জীবনের বন্ধু আরিফুল ইসলাম সুমন পেশায় ব্যাংকার। মোরশেদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের বন্ধু সুমন, তাদের বন্ধুত্বের বয়স প্রায় ১৪-১৫ বছর। বাসা একই এলাকাতে হওয়ায় হৃদ্যতা আরো বেশি। পরের স্থানেই আছে রাজিনুল করিম সোহান, পেশায় ব্যাবসায়ি আমার এই বন্ধুর নেশা গান গাওয়া। বন্ধুত্বের বয়স খুব বেশি না হলেও সম্পর্ক মোটামুটি যমজ ভাই পর্যায়ের। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের দুইজনের জন্ম একই দিনে। আমার কলেজ জীবনের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড বন্ধু তুরহান আল নাহিয়ান। আঁকাআঁকি বাদে এমন কিছু নাই সে পারে না এবং করে নাই। তবে ওর লেখক হিসেবে পরিচিতিটা আমার সবচেয়ে পছন্দ। বর্তমানে সে রেডিও জকি হিসেবে কাজ করছে।

আমার আরেক বন্ধু, ক্যাপ্টেন মুক্তাদির সাকি। সে বন্ধু কম ভাইই বেশি বলা যায়। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আমার এই বন্ধু ছুটিতে আসলে আর দরকার না হলে আমাকে জীবনেও খুঁজে না, আমিও অবশ্য একই কাজ করে থাকি। এছাড়াও আরো প্রচুর বন্ধু থাকলেও এই ক'জন আমার ভালো সময়ের চেয়ে খারাপ সময়েই বেশি ছিল, এখনও থাকে এবং সারাজীবন থাকবে বলেও আমার বিশ্বাস।

পরিবার

মোরশেদ মিশু ১৯৯১ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ইব্রাহীমপুর আদর্শপল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। আকিকা করা নাম আব্দুল্লাহ আল মোরশেদ হলেও কার্টুন আঁকেন মোরশেদ মিশু নামে। তার ডাক নাম মিশু। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। গৃহিনী মা  নীলুফা রাজ্জাককে নিয়ে মিশু বলেন, আমার চোখে আমার আম্মা রীতিমত আয়রন লেডি। জীবনের কঠিন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সাথে সামলানোর অদ্ভুত গুণ আছে ওনার।

তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে মোরশেদ সবার ছোট। বড় বোন রাজিয়া ফেরদৌস দুই সন্তানের জননী। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। বোনের স্বামী একজন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা মেজর ফেরদৌস কায়সার খান। বড় ভাই নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার স্ত্রী নুসরাত জাহান পেশায় একজন ব্যাংকার, তাদের একটি কণ্যা সন্তান আছে। মোরশেদ মিশুর লিভিং লিজেন্ড তার মেজো ভাই। পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত আব্দুল্লাহ আল মাহিন। কারণ কার্টুন আঁকার হাতেখড়ি এই ভাইয়েরর হাত ধরেই।

শিক্ষাজীবন

মোরশেদ মিশুর প্রথম স্কুল মিরপুরের ইউনিভার্সাল কিন্ডারগার্ডেন। সেখানে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পড়া শেষে ভর্তি হন শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে। এখান থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি।  ২০১০ সালে ঢাকা বিএন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপর কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ভর্তি হন মোরশেদ। তবে চার বছরের কোর্সে তৃতীয় বছরেই লেখাপড়া ছেড়ে দেন মিশু। 

এই বিষয়ে তিনি জানান, পড়ালেখার একটা সময় পর মনে হয়েছে সার্টিফিকেট কিংবা সিজিপিএর চেয়ে অধ্যাবসায় আর একাগ্রতা বেশি গুরুত্ব বহন করে। মনে হবার সাথে সাথে আর সময় নষ্ট করতে মন টানে নাই। মনে রাখবেন, যে জিনিসে আপনার মন টানবে না, তার পিছনে শুধু শুধু সময় দেয়া প্রাণশক্তির অপচয় ছাড়া কিছু না। সার্টিফিকেটের ভরে বাঁচার চেয়ে আমার কাছে আনন্দ সহকারে বাঁচাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

মোরশেদ মিশু ৯টা জাতীয় এবং ২টা আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। লন্ডন এবং বার্লিনে তার আঁকা কার্টুন প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও বইমেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকাশনীর এবং লেখকের জন্য বইয়ের প্রচ্ছদও করছেন মিশু।

সম্পাদনা: এম. মিজানুর রহমান সোহেল

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...