ছবি সংগৃহীত

বাংলা ব্যান্ড সংগীতের ত্রিকাল

একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই "পপ সংগীত" নামে বাংলা গানের যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছিল, তা পরবর্তীতে ব্যান্ড সংগীত নামে শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। প্রয়াত ফিরোজ সাঁই, প্রয়াত আজম খান, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও পিলু মমতাজ শুরুতে এই পাঁচজন ছিলেন পপ সংগীতের পাঁচ কান্ডারী। তাদেরকে পাঁচপীর নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে আজম খান তার ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড দিয়ে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং পপসম্রাট, গুরু ইত্যাদি নামে খ্যাত হন।

আল মামুন সোহাগ
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০১৪, ০৫:০৭ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৬
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০১৪, ০৫:০৭ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৬


ছবি সংগৃহীত
একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই "পপ সংগীত" নামে বাংলা গানের যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছিল, তা পরবর্তীতে ব্যান্ড সংগীত নামে শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। মূলত বিদেশী গানের যন্ত্রানুসঙ্গের অনুকরণে ব্যান্ড সংগীত যাত্রা শুরু করলেও গানের কথায় নতুনত্ব, সুর ও যন্ত্রের ব্যবহারে তারুণ্যের ছোঁয়া থাকায় বাংলাদেশি ব্যান্ড সংগীত বাংলা গানেরই নতুন একটি ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। প্রয়াত ফিরোজ সাঁই, প্রয়াত আজম খান, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও পিলু মমতাজ শুরুতে এই পাঁচজন ছিলেন পপ সংগীতের পাঁচ কান্ডারী। তাদেরকে পাঁচপীর নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে আজম খান তার ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড দিয়ে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং পপসম্রাট, গুরু ইত্যাদি নামে খ্যাত হন।
আশি-নব্বই দশক জুড়ে ব্যান্ড সংগীত স্বর্ণোজ্জল সময় পার করে। এ সময়ে বিভিন্ন ঢঙের গান নিয়ে অসাধারণ সব ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করে। ফিডব্যাক, চাইম, মাইলস, ডিফরেন্ট টাচ, সোলস, প্রমিথিউস, এলআরবি, আর্ক, ফিলিংস, উইনিং এসব ব্যান্ড তাদের গানের জোয়ারে তারুণ্যকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এসব ব্যান্ডের অসংখ্য গান শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। ব্যান্ডগুলোর কনসার্টে উপচে পড়া ভিড় তরুণ প্রজন্মকে বাংলা গানের নতুন স্বাদ দেয়। বিভিন্ন ব্যান্ডের এ্যালবামগুলো অডিও বাজারকে চাঙ্গা করে তোলে। বলা বাহুল্য যে ব্যান্ডের জোয়ারে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক ভূঁইফোঁড় ব্যান্ডেরও উৎপত্তি হতে থাকে, তবে সেসব কালের বিবর্তনে হারিয়েও যায়। নব্বইয়ের মাঝামাঝি ব্যান্ড সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করে মিক্সড এ্যালবাম। চাইম, আর্ক খ্যাত সুরকার ও মিউজিক কম্পোজার আশিকুজ্জামান টুলু বিভিন্ন ব্যান্ডের গায়কদের একই এ্যালবামে আবদ্ধ করে মিক্সড এ্যালবামের প্রচলন করেন। ব্যান্ড মিক্সড এ্যালবামকে তুমুল জনপ্রিয়তায় নিয়ে যায় সুরকার প্রিন্স মাহমুদ। প্রিন্স মাহমুদের সুরে একেকটি এ্যালবাম ব্যান্ড সংগীতকে সর্বমহলের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। কালজয়ী সব গান তৈরি হয় প্রিন্স মাহমুদের সুরে। মিক্সড এ্যালবাম প্রকাশের ধারাবাহিকতায় গীতিকার তরুন ও জামিউর রহমান রনিমকে নিয়ে ব্যান্ডপ্রেমীদের অসাধারণ কিছু মেলোডিয়াস গান উপহার দেন যুগল সুরকার জুয়েল-বাবু। নব্বই দশকের শেষদিকে ভিন্ন ধারার গান নিয়ে শ্রোতাদের মনযোগ আকর্ষণ করে ব্যান্ড দলছুট। ব্যান্ড সংগীত নিয়ে নানান আয়োজন নব্বই দশককে ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগ করে রেখেছে। নানান প্রতিযোগিতা-রিয়েলিটি শো’র মধ্য দিয়ে নতুন নতুন ব্যান্ডের সাথে পরিচিত হয় শ্রোতারা। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আসা ব্যান্ড দ্য ট্র্যাপ, ভাইকিংস, স্টিলার ব্যান্ডগুলো শ্রোতাপ্রিয় সব গান উপহার দেয়।
আলোর পরেই হয়তো অন্ধকার থাকে। নতুন শতাব্দীতে এসে ২০০০ সালের পর থেকে ব্যান্ড সংগীত যেন অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়। নিম্ন মানের কথা, সুর, কম্পোজিশন, অতি বাণিজ্যিকতা ইত্যাদি কারণে ব্যান্ড সংগীত তার জৌলুস হারাতে থাকে। অতি বাণিজ্যিকতার স্রোতে অনেক গুণী ব্যান্ড ও ব্যান্ড গায়কও গা ভাসিয়ে দেন। একদিকে অযোগ্য লোকের আধিপত্য অন্যদিকে অডিও পাইরেসির কারণে ব্যান্ডগুলোও যেন গুটিয়ে যেতে থাকে। তার সাথে যুক্ত হয় সংগীতে নতুন প্রযু্ক্তির প্রয়োগ। সফটওয়ারভিত্তিক বাণিজ্যিক সংগীতের চর্চা ব্যান্ড অনরাগীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে ব্যান্ড সংগীত যেন তার তারুণ্য হারিয়ে প্রৌড়ত্বের দিকে যেতে থাকে, যার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। আশার কথা হলো নানান প্রতিকুলতা নিয়ে এখনো অনেক ব্যান্ড তার নিজস্বতা নিয়ে টিকে আছে এবং নতুন নতুন ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করছে। সংগীতকে ভালবেসে এখনকার প্রজন্মও গিটার হাতে কণ্ঠে তুলে নিচ্ছে নতুন দিনের গান। হালে এসে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যান্ডগুলোর সরাসরি সংগীত পরিবেশনা ব্যান্ড সংগীতপ্রেমীদের নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণালী দিন হয়তো আবারও ফিরে আসবে। শ্রোতাদেরকে নতুন রুচীর গানের সাথে পরিচিত করেছিল যে ব্যান্ড সংগীত, তা বাংলা গানকে দিন দিন আরো সমৃদ্ধ করুক ব্যান্ডপ্রেমীদের এই কামনা।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...