ছবি সংগৃহীত

গোপনে সম্পন্ন হয়েছে মানব ক্লোন?

ডলি নামক ভেড়াটিকে ক্লোন করতে ২৭৭টি কোষ ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত করা হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৩টি প্রেগনেন্সি পর্যন্ত গিয়েছিল, তারও মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছিল একটি মাত্র ভেড়া শিশু। দেড় যুগ পার হয়ে গিয়েছে ডলির জন্মের পর,এতদিনে জেনেটিক বিজ্ঞান হয়েছে আরও উন্নত। অনেকে তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে মানুষের ক্লোন সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে মানব ক্লোন নিষিদ্ধ,সেজন্যই হয়তো এ বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে না।

nazneen nahar
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০১৩, ০৫:০২ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮, ০১:৩৬
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০১৩, ০৫:০২ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮, ০১:৩৬


ছবি সংগৃহীত
মা আর মেয়ে হুবহু একরকম দেখতে ,তা কি দেখেছেন কেউ? কিংবা বাবা আর ছেলে? কেউ বোধহয় তা দেখেনি। আসলে এটা কখনও হয় না। দুজনের চেহারায় হয়তো অনেক অনেক মিল থাকে, কিন্তু হুবহু একই রকম চেহারা, প্রকৃতপক্ষে সেটা হয়না। বাস্তবে না হোক সিনেমায় অবশ্য তা হয়। অমিতাভ বচ্চনের ছেলে অমিতাভ বচ্চন কিংবা সুচিত্রা সেনের মেয়ে সুচিত্রা সেন। একেবারে একই দেখতে। সিনেমার কাহিনী এখন বাস্তবেও হতে চলেছে। আর সেটা সম্ভব হচ্ছে ক্লোনের বদৌলতে। সেই ১৯৯৬ সনে স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানী ডঃ আয়ান উইলমুট ফিন ডরসেট ভেড়ার ক্লোন করেছিলেন। ক্লোনের মাধ্যমে একটি ভেড়া শিশু জন্মলাভের পর সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল যে খুব শীঘ্রই পৃথিবীতে ক্লোন শিশু জন্মলাভ করতে যাচ্ছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পরও কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর,অথচ আজও আমরা পেলাম না সেই কাঙ্খিত সংবাদটি।
যেহেতু প্রায় সব উন্নত দেশগুলোতে মানব ক্লোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে,আবার ক্লোন করার প্রক্রিয়াটাও চলছে উন্নত দেশসমুহে, সেজন্যই হয়ত বিজ্ঞানীরা মানব শিশু ক্লোন করলেও সেটা গোপন করে চলেছেন। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় ক্লোন সম্পর্কিত কার্যক্রম মোটেই থেমে নেই। মানুষের ক্লোন ভালো কি মন্দ সে বিতর্ক অনেক পরের ব্যাপার,কেননা মন্দ ভালো বিবেচনা করে কোনো গবেষনা কখনও থেমে থাকে না। যেমন ছিল না পারমানবিক অস্ত্র গবেষনা বিষয়ক কার্যক্রম। ক্লোন নিয়ে গবেষনা চলবেই। আমাদের অজান্তেই হয়ত কোন ক্লোন শিশুর জন্ম হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে কখনো তা আমরা জানতে পারব।

ক্লোন কিভাবে করা হয়?

আমাদের শরীর গঠিত হয়েছে একটির পর একটি কোষ সাজিয়ে। মানব দেহ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ডিম্বাণু ও একটি শুক্রাণুর মিলনে তৈরি হয় একটি জাইগোট। পরস্পরের ডিএনএ নমুনার মিলনে সৃষ্টি হয় নতুন ডিএনএ। এরপর সেই জাইগোট কোষের বিভাজন শুরু হয়, ক্রমশ একটি মানব ভরুনের আকৃতি নিতে থাকে। একে একে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তৈরী হয় ও পূর্ণতা পেতে থাকে। দেহের প্রতিটি কোষে একটি করে ডিএনএ থাকলেও স্হান বিশেষে তারা কাজ করে আলাদা আলাদা। তার কারণ হচ্ছে, বিশেষ কাজগুলো করে কোষের প্রয়োজনীয় ছোট্ট একটি অংশ- জিন। ডিএনএ এর বাকি অংশটা থাকে নিষ্ক্রিয়। ভ্রুনের প্রাথমিক অবস্হায় একটি ডিএনএ তৈরী করতে পারে শরীরের যে কোন অঙ্গ। পরে ধীরে ধীরে নিজের নিজের কাজের হদিস পায় কোষগুলো। যেমন ত্বকের কোষ জেনে যায় তার কাজ, আবার হৃৎপিন্ডের কোষ জানতে পারে তার কাজ কি। ডঃ উইলমুট একটি ফিন ডরসেট ভেড়ার বাটের একটা কোষ নিয়েছিলেন। যেহেতু কোষটি বাটের, তাই তার পক্ষে বাটের কাজ ছাড়া তো অন্য কাজ করা সম্ভব নয়। তাহলে? ডঃ উইলমুট কোষটার পুষ্টি কমিয়ে দিলেন। ফলে কম পুষ্টি পেয়ে ক্ষুধার্ত কোষের বিভাজন বন্ধ হয়ে গেল। কয়েকদিনের মধ্যেই কোষটি হয়ে গেল নিষ্ক্রিয়। তখন তা একেবারে প্রাথমিক অবস্হার কোষের মত হয়ে গেল, তার মধ্যে প্রত্যেক কাজের জিনই আবার সক্রিয় হয়ে উঠল।
এবারে একটি স্কটিশ ব্ল্যাকফেস ভেড়ার ডিম্বানু সংগ্রহ করে তার ভিতর থেকে ডিএনএসহ নিউক্লিয়াসটিকে বের করে নেওয়া হল। তারপর ফিন ডরসেট ভেড়ার বাটের কোষটি ঐ ফাঁপা ডিম্বানুতে স্হাপন করলেন। এবার বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে কোষদুটিকে নিষিক্ত করা হলো। শুরু হয়ে গেল কোষের বিভাজন। ছয় দিন পরে অন্য আর একটি ব্লাকফেস ভেড়ার জরায়ুতে ভ্রুনটি স্হাপন করা হলো। এই ভেড়াটি হচ্ছে ভাড়াটে মা কিংবা সারোগেট মাদার। এই মা নিজের ভিতরে ভেড়া শিশুটিকে বড় করে এবং যথাসময়ে প্রসব করে। ভেড়াটির ডিএনএ হুবুহু ফিনডরসেট ভেড়ার মত,যার বাট থেকে কোষ নেওয়া হয়েছিল। স্বভাবতই ভেড়াটি দেখতে অবিকল তার মায়ের মত। আর তার নাম রাখা হলো ডলি।

আলোচনা-সমালোচনাঃ

ডলির জন্মের পর পরই সারা বিশ্বে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে যায় যে ভেড়াকে যখন ক্লোন করা সম্ভব হয়েছে, তখন মানুষকে ক্লোন করা যাবে না কেন? অনেকে এটা বিশ্বাসও করেন যে ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে মানুষের ক্লোন সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে মানব ক্লোন নিষিদ্ধ,সেজন্যই হয়তো এ বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে না। অপরপক্ষে এটাও ঠিক যে ক্লোন কিন্তু মোটেই কোন সহজ ব্যাপার নয়। ডলিকে ক্লোন করতে ২৭৭টি কোষ ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত করা হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৩টি প্রেগনেন্সি পর্যন্ত গিয়েছিল, তারও মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছিল একটি মাত্র ভেড়া শিশু। কাজেই যেখানে একটি ভেড়াকে ক্লোন করতেই এত চেষ্টা করতে হয়েছে, সেখানে একজন মানুষকে ক্লোন করতে কতবার চেষ্টা করতে হবে? তাই মানব ক্লোন এত সহজ নয়। তারপরও দেড় যুগ পার হয়ে গিয়েছে ডলির জন্মের পর,এতদিনে জেনেটিক বিজ্ঞান হয়েছে আরও উন্নত। যেসব বাধাবিঘ্ন ছিল, নিশ্চয়ই তা সহজে সমাধান করার পথ বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। আর মানুষকে যদি সত্য সত্যই ক্লোন করা হয়ে থাকে তা আজ হোক, কাল হোক সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে একদিন পারবেই।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...