ব্রিস্টলের অ্যাভন নদীর পাড় ধরে ছুটে চলছিল বাস। গন্তব্য নতুন শহর টনটন। ছিল না এক ফোঁটা বৃষ্টি। এক সহকর্মী বলে উঠলেন, ইশ্! এমন দিনটি যদি গতকাল থাকতো! বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ভেসে যেতো না। হয়তো জয় দিয়ে যাত্রা হতো টনটনে। এখন পয়েন্ট ভাগাভাগির যন্ত্রণা। তবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। তাই দুপুরেই নতুন শহরের পথ ধরে বাংলাদেশ দল। বলে রাখা ভালো দল বলতে কিন্তু সবাই নয়। দলের খেলোয়াড়দের দেয়া হয়েছে ছুটি। সেই সুযোগে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস ও মোহাম্মদ মিঠুন আসেননি দলের সঙ্গে। তবে আজ এক সঙ্গে শুরু করবেন অনুশীলন। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা টনটনে নেমেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বের হয়ে পড়েন বেড়াতে। বাকিরা সময় কাটিয়েছেন যে যার মতো। টাইগাররা যখন টনটনে পৌঁছে তখন তাদের হোটেল থেকে কিছুটা দূরেই সমারসেট কাউন্টি স্টেডিয়ামে চলছে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের লড়াই। বিকালে টিম হোটেলের লবিতে নেমে এলেন ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। ছুটির বিষয়টা বেশ পরিষ্কার করেই জানালেন তিনি। দারুণ শুরুর পর দলকে গ্রাস করেছে হতাশা। তাই টাইগারদের জাগিয়ে তুলতেই ‘ছুটি’। তিনি বলেন, ‘হতাশ তো অবশ্যই। খেলাটা হলে ভালো হত। হারজিত পরের কথা। আমরা সব খেলা জেতার জন্য এখানে এসেছি। নির্দিষ্ট কোনো ম্যাচকে লক্ষ্য করে আসিনি। প্রতিটি দলই কঠিন। সহজ কোনটিই না। যেটা শেষ হয়ে গেছে সেটা শেষ, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১ পয়েন্ট পেয়েছি এটা শেষ। সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলা ১৭ তারিখে। অনুশীলনে দুদিন বিশ্রাম আছে। কাল থেকে অনুশীলন হবে। বাংলাদেশ দল টনটনে এসেছে শুনে বেশ কয়েকজন দর্শক টিম হোটলে ভিড় করেন। তারা জানালেন এখানে সিটি সেন্টার মার্কেটে মাশরাফির সঙ্গে তারা ছবি তুলেছেন। এবার অন্যদের জন্য অপেক্ষা তাদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে এলেন রুবেল হোসেন। এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। টনটনের স্টেডিয়ামে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের উৎসব চলছে। তাই হয়তো এই ম্যাচে আশা করতে পারেন দলে থাকার। তাকে দেখেই ভক্তদের ছবি তোলার হিড়িক। বাদ গেল না পাকিস্তান থেকে আসা ক্রিকেট সমর্থকরাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহী, মেহেদী হাসান মিরাজও নেমে এলেন। সবাই যাবেন খাওয়ার জন্য বাইরে। মিরাজের হাতে জায়নামাজ, তার মানে নামাজ পড়েই ফিরবেন হোটেলে। আলাপচারিতার ফাঁকে সৌম্য বললেন, ‘ভালো আছি। না, এই মাঠে আগে খেলা হয়নি। দেখি কী হয়।’ তবে খেলা নিয়ে খুব একটা কথা বলতে রাজি নয় অন্য ক্রিকেটাররা। হাসলেন মিরাজ, বলেন, ‘ভালো আছি, চেষ্টা করবো সুযোগ পেলে।’ রাহীর অবশ্য কিছুই বলার নেই দলে থাকলেও এখনো একাদশে সুযোগ হয়নি তার। মোস্তাফিজ চওড়া হাসি দিলেন। কিন্তু মুখ খুললেন না। অন্যদিকে রুম থেকে বের হলেন না মুশফিকুর রহীম। তবে তার ভায়রা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দেখা গেল স্থানীয় একটি বাংলা খাবার হোটেল তাজমহলে পরিবার নিয়ে। তবে তাকে দেখে বিক্ষিপ্তই মনে হলো। পরিচিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে চাইলেন না। ভালো আছি বলা ছাড়া। এরপর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে রেস্তোরার এক কোণে একটি টেবিল খুঁজে খাবার অর্ডার দিতে লাগলেন। অন্যদিকে জানা গেল তামিম-সাকিব-লিটন, সাব্বিরের আগেই ফিরে আসবেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ১৭ই জুন টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুুখি হবে বাংলাদেশ দল। সোমবার সেই মাঠে খেলা চলায় দলের কেউই সেখানে যেতে পারেননি। এখানে আগে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ দল। তাই অপরিচিত মাঠ বলার অপেক্ষা রাখে না। ভেন্যু নিয়ে ম্যানেজার সুজন বলেন, ‘না, আগে বাংলাদেশ দল এখানে খেলতে আসেনি। আমিও আসিনি এই মাঠে। যতটা জানি ছোট মাঠ। কিন্তু তারপরেও আমরা আশাবাদী। আমরা ভাল ক্রিকেট খেলছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা খুব একটা ভালো করতে পারিনি। তারপরেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা জিতলাম, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ক্লোজ ম্যাচে হেরে গেছি। দল ভালো খেলছে। আশা করি আমরা ভালো করবো।