কিছুদিন ধরেই হাওয়ায় ভাসছিল বাম ভোট বিজেপির দিকেই যাচ্ছে। গ্র্রামবাংলায় কট্টর বামরা বিজেপিতেই নাম লেখাচ্ছে দলে দলে। এমনকি, টিভিতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সে কথা অনেক বাম সমর্থককে গলা উঁচিয়ে বলতে শোনা গেছে। আর তাই নির্বাচন শেষে বুথফেরত সমীক্ষায় যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, তাতে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে, রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পিছনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রয়েছে বামভোটের। মনে করা হচ্ছে, আদর্শকে আপাতত সিকেয় তুলে রেখে বামরা নির্দ্বিধায় ভোট দিয়েছে সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্ষয়িষ্ণু বাম সংগঠনের ওপর ভরসা না রেখে বিজেপিতেই আপাতত নির্ভর করেছে দীর্ঘদিনের বামকর্মী ও সমর্থকরা। তাই রাজ্যে বামরা একটিও আসন পাবে বলে ইঙ্গিত দিতে পারেনি কোনো সমীক্ষা। একটি ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বামরা একটি আসন পেলেও পেতে পারে। অবশ্য বাম নেতারা মনে করছেন, তারা ৫টি আসনে ভালো লড়াই দিয়েছে। তাই ভোট শতাংশের দিকেই তারা আপাতত তাকিয়ে। তবে বিজেপি নেতারা প্রথম থেকেই ধরে নিয়েছেন, বাম ভোট আরো ক্ষয় হয়ে তাদের দিকে আসছে এবং তার ফলে বিজেপির পক্ষে ঢেউ উঠবে। অনেক বাম নেতা ঘনিষ্ঠ আলোচনায় মেনে নিয়েছেন, নিচুতলার বামকর্মী ও সমর্থকদের মনোভাব ছিল আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানো যাক, তার পরে বুঝে নেয়া যাবে। এই মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবে কিছু ভোট বিজেপির দিকে যেতে পারে। তা ছাড়া কমিটেড বাম ভোটের বাইরেও যে ভোট এদিন বামরা পেয়ে এসেছে তারও দিক পরিবর্তন অসম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বুথফেরত সমীক্ষায় দেয়া ইঙ্গিতকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বানানো গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও বিজেপি মনে করছে বুথফেরত জরিপের চেয়েও ভালো ফল করবে বিজেপি। বিভিন্ন সমীক্ষায় বিজেপি ১১ থেকে ১৬টি আসন পাবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হলেও ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস সংস্থার জরিপে বিজেপি ২৩টি আসন পর্যন্ত পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস নেমে আসতে পারে ২২টিতে। তবে এই সব জরিপে বামদের কোনো আসন দেয়া হয় নি। কংগ্রেসকে দেয়া হয়েছে ২টি আসন। বিভিন্ন্ সমীক্ষক সংস্থার জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজ্যে ভোটের ক্ষেত্রে প্রবল মেরূকরণও এই ফলের পেছনে কাজ করেছে। জরিপের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, রাজ্যে মুসলিম ভোটের মাত্র ১ শতাংশ বিজেপি পেয়েছে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেস পেয়েছে ২২ শতাংশ। আর এটা আগেভাগে বুঝতে পেরেই বিজেপি নেতারা মেরূকরণের কাজ তীব্র করতে মমতার বিরুদ্ধে তুষ্টিকরণের অভিযোগ তুলেছেন বার বার। এমনকি অনুপ্রবেশকারীদের মদত দেয়ার অভিযোগও করেছেন বারে বারে। এই প্রচারের ফলেই দেখা গেছে, হিন্দু ভোটের ৫০ শতাংশই বিজেপি তাদের দিকে টানতে সমর্থ হয়েছে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৭ শতাংশ এবং অন্যরা ২৩ শতাংশ। ধর্মভিত্তিক এই মেরূকরণের ফলেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি অর্ধেক আসনও পেতে পারে বলে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা আগে থেকেই ধরে নিয়েছিলেন। বিজেপির সভাপতি প্রথম থেকেই রাজ্যে বিজেপির লক্ষ্যমাত্রা ২৩ শতাংশ ধার্য করে দিয়েছিলেন। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশি আসন পাবার লক্ষ্যে বিজেপি সবচেয়ে বেশি রিসোর্স ব্যয় করেছে। মোদি ১৯টি জনসভা করেছেন। সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামমাধব বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ফল সব ভোট-পণ্ডিতদেরও চমকে দেবে। বুথফেরত জরিপ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে মানুষ বিজেপি এবং মোদির প্রতি যে সমর্থন দেখিয়েছেন তা সকলেই দেখেছেন। তাই আমরা সেখানে আরো ভালো ফল করবো। তিনি ২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপির ফলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সেটিই ঘটতে চলেছে। সুতরাং চমকের জন্য অপেক্ষা করুন। তবে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মনে করেন, বিজেপি যে আসন পাবে বলে দেখানো হয়েছে তা সবই ভুয়া প্রচার।