কে হবেন মাশরাফি বিন মুর্তজার বিকল্প? তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা দলে না থাকলে কী হবে! তাদের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ কি দলে নেই? যত দিন যাচ্ছে এমন সব প্রশ্ন ভিড় করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে। অধিনায়ক মাশরাফি তার শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন ইংল্যান্ডে। দলের বাকি সিনিয়র খেলোয়াড়রা হয়তো পরের বিশ্বকাপেও খেলবেন। কিন্তু তাদের শূন্যস্থান পূরণে তরুণ সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, তাসকিন আহমেদদের ওপর যেন ভরসাই রাখা যাচ্ছিল না। সিনিয়রদের ব্যাট হাসলেই দল জেতে, তরুণরা ম্যাচ জিতিয়েছে এমন বড় কোনো ঘটনা ছিল না বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ক্রিকেটে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। তবে এবার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে সেই তরুণরাই বদলে দিয়েছে ইতিহাস। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে ছিনিয়ে এনেছে দেশের জন্য প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা। সেই কারণেই দলের প্রধান কোচ পেয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার রশদ। কারণ ৫ সিনিয়রের পর তিনি এবার সৌম্যদের উপর ভরসা করেই টাইগারদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন সামনের দিকে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস বলেন, ‘এর মানে এটাই যে বাংলাদেশের স্কোয়াড দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং স্কোয়াডের এই গভীরতাটাই আমরা চাইছি। সেটি যদি আমরা অর্জন করতে পারি তাহলে মানুষ সেই পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলা থামিয়ে দিবে। এর মানে এদের কেউ না থাকলেও আমরা শক্তিশালী দল।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ইনজুরির কারণে নিজেই ঝুঁকি নেননি তিনি। তবে তার না থাকার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি সৌম্য, মোসাদ্দেকরা। সৌম্য ৪১ বলে ৬৬ রান করে আউট হলেও ২৭ বলে ৫২রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক। এমন পারফরম্যান্সের পর কোচতো উদাহরণ হিসেবেই মোসাদ্দেককে সামনে আনলেন। বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ রোডস বলেন, ‘আপনি যদি মোসাদ্দেককে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখেন, সে কিন্তু দলের প্রত্যেককে ভাবতে এখন বাধ্য করতে যাচ্ছে। স্কোয়াডের গভীরতা এটাই যে সে হয়তো নাও খেলতে পারে এবং তাই যদি হয় তাহলেও আমরা ভালো অবস্থানে থাকতে পারবো (অন্যান্যদের পারফর্মেন্সে), কেননা আরও ভালো খেলোয়াড় দলে রয়েছে।’ আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে আরো ৪টি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু একবারও শিরোপা হাতে ওঠেনি টাইগারদের। তবে এবার সেই ইতিহাস বদলেছে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফাইনালসহ হারিয়েছে তিন ম্যাচে। বিশেষ করে ফাইনালে ২৪ ওভারে ২১০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করেই জয় পায় দল। হারিয়েছে আইরিশদেরও হেসেখেলে। শিষ্যদের এমন পারফরম্যান্সের পর প্রধান কোচ রোডসের আত্নবিশ্বস বলা চলে এখন দিগুন। শুধু ফাইনালেই নয়, সম্পূর্ণ সিরিজ জুড়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করেছেন সৌম্য। তিন ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার টানা তিনটিতেই হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক। বল হাতে প্রতিভা দেখিয়েছেন ত্রিদেশীয় সিরিজে অভিষেক হওয়া আবু জায়েদ রাহী। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে কোচ এখন পাঁচ সিনিয়রের বাইরেও খুঁজে পেয়েছেন লড়াই করার সৈনিক। আয়ারল্যান্ড থেকে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে চারদিনের ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আরেক সিনিয়র তামিম ইকবাল গেছেন পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে সময় কাটাতে। তবে দলের বাকি সদস্যরা এখন ইংল্যান্ডে। লেস্টার শায়ারে শুরু করেছেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। বিশেষ করে ব্যাটিং বোলিং নিয়ে কাজ করছেন কোচিং স্টাফ। সেই সঙ্গে চলছে ইংলিশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টাও। যদিও দীর্ঘ দিন আয়ারল্যান্ড সফরে থাকায় ইংলিশ কন্ডিশনে খুব একটা কঠিন হবে না টাইগারদের। আগামী ২৬শে মে পাকিস্তানের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ মিশন। এরপর কার্ডিফেই ২৮শে মে ভারতের সঙ্গে খেলবে আরো একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আগামী ২রা জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওভালে শুরু হবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আসল লড়াই।