ইয়াঙ্গুনে বিমান দুর্ঘটনার পর দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চারটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিবর্তন হয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত দেশের ভেতরকার চারটি রুটের আরো সাতটি ফ্লাইটেও শিডিউল বিপর্যয় থাকবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। তবে ইয়াঙ্গুন দুর্ঘটনার কারণে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটে কোন প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এদিকে, মিয়ানমারে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়া দশ জন যাত্রী ও বিমানের কর্মীর বিশেষ একটি ফ্লাইটে গতকাল রাতে ঢাকায় পৌঁছান। এদের মধ্যে রয়েছেন আহত ৪ যাত্রী, ২ পাইলট, ২ জন কেবিন ক্রু ও আরো ২ জন গ্রুপ ইঞ্জিনিয়ার। শুক্রবার রাত আনুমানিক দশটার দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। মিয়ানমারে ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ মডেলের একটি বিমান জরুরি অবতরণের সময় মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যাওয়ায় উড়োজাহাজ সঙ্কটে জটিলতায় পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের জনসংযোগ শাখার জিএম শাকিল মেরাজ জানান, দুর্ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ রুটের সাতটি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। তিনি বলেন, হঠাৎ করে একটি উড়োজাহাজ বিকল হওয়ায় আগামী সোমবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, সিলেট, যশোর ও রাজশাহী রুটের সাতটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা গেছে, ওই বিমানে আগুন না ধরলেও ফিউজিলাজ ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। ফরোয়ার্ড প্যাসেঞ্জার ডোরের পেছনে এবং রিয়ার সার্ভিস ডোরের ঠিক পেছনে কাঠামো ভেঙে গেছে। উড়োজাহাজের তলাও ফেটে গেছে। বিমান সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী রুটে ছোট এয়ারক্রাফট না থাকায় বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্লাইটগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। তবে শিডিউল স্বাভাবিক করতে এসব রুটে বড় এয়ার ক্রাফট নেয়ারও সুযোগ নেই। সূত্র জানায়, ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় কাটানোর জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কলকাতাতে ড্যাশ-৮ এর মতো ছোট এয়ারক্রাফটের বদলে বড় এয়ারক্রাফট ব্যবহার করতে চাইছে বিমান। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বড় বোয়িং ৭৭৭, ৭৩৭ ও ৭৮৭ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। সুতরাং এসব রুটে বড় এয়ার ক্রাফট ব্যবহার হলে শিডিউল জটিলতা কিছুটা কমবে। এছাড়া চলতি সপ্তাহে বিমানের বহরে নতুন একটি এয়ার ক্রাফট যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এয়ারক্রাফটি যোগ হলে উড়োজাহাজ সংকট মোকাবিলায় খানিকটা বেগ পাবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা। এদিকে মিয়ানমার দুর্ঘটনার কারণে বিমানের ঈদ ফ্লাইটেও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। প্রতিবছর ঈদের সময় অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে তিনটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ এবং সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বড় বোয়িং ৭৮৭, ৭৭৭ ও ৭৩৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়। তবে উড়োজাহাজ নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ায় এবার সম্ভাব্য অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি সূত্র। বিমানের কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ বলেন, অভ্যন্তরীণ রুট ছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। তবে বিমানের শিডিউলে যে জটিলতা রয়েছে তা আগামী ১৩ মে থেকে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া আনা হচ্ছে জানিয়ে শাকিল মেরাজ বলেন, আলাফকো এভিয়েশন লিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির কাছ থেকে ছয় বছরের জন্য দুটি বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফট লিজ নেয়া হচ্ছে। এর একটি শুক্রবারই বিমান বহরে যুক্ত হওয়ার কথা। ১০ জুন হবে আরেকটি।