বাজার নিয়ন্ত্রকরাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার: বিএনপি
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০১৯, ০০:০০
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। বলেছেন, সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায় নেই। অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে তারা জিম্মি। বাজারের দুষ্টচক্র সিণ্ডিকেট এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কারণ বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র ধরাছোঁয়ার বাইরে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ শেষে এখন ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের অধিকার কেড়ে নিতে তারা তৎপর। রোজায় বাজার পরিস্থিতিতে জনজীবনের দুরবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ এ কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়বে না এমন ঘোষণার পরদিন থেকেই হু হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে তিন থেকে চারগুণ। তা নিয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বাগাড়ম্বর করে চলেছেন। রাজধানীতে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত মূল্যে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, রমজানে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত গরুর মাংসের মূল্য প্রতিকেজি ৫২৫ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা। কিন্তু এখন বিভিন্ন এলাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা এবং খাসির মাসং ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারি লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ সরকারের ওপর মহলেও যাচ্ছে। আওয়ামী সিণ্ডিকেট পবিত্র রমজান মাস এলেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারি দলের সিণ্ডিকেটকে দায়ী করেন রিজভী। পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন রোয়েদাদ এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিলগুলোতে শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ সাপ্তাহের মজুরি বাকি পড়ে রয়েছে। স্টাফদের তিন মাসের বেতন বাকি। সামনে ঈদ আসছে, তাদের সন্তানদের কাপড় দেয়া দূরে থাক, তাদের পেটের আহারটুকু যোগাতে পারবে কিনা- আজকে শ্রমিকরা সন্দিহান। রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে আমি দলের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, সব ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ এই মিডনাইট নির্বাচনের অন্ধকারের সরকারকে বলবো- দ্রুত পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেশের জনগণের ঘাড়ে জোর করে চেপে থেকে আর কষ্ট দেবেন না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা না পেয়ে দুঃসহ যাতনা ভোগ করছেন। তাঁকে মুক্তি দিলে তিনি তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে পারবেন। ভালোভাবে রোজা পালন করতে পারবেন। আদালতকে কুক্ষিগত করে রেখে তাঁর জামিনে পদে পদে বাধা দেয়া বন্ধ করুন। জামিনে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন। রিজভী বলেন, প্রতিদিন নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে গড়ে ২০ জনের অধিক। প্রতিদিন গড়ে খুনের ঘটনা ঘটছে ১৫ থেকে ২০ জনের অধিক। চলন্ত গাড়ি, বাসাবাড়ী, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন অফিস কোথাও নারী নির্যাতন থেমে নেই। দিনের পর দিন বিচার বহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক রোগীর মতো মানুষ খুনের নেশায় পেয়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পত্রিকার পাতা খুললেই বিচার বহির্ভূত হত্যার হিড়িক দেখা যায়। সরকারের উন্নয়নের জয়োল্লাসের মধ্যে এত হিংসার ছবি কেন? এটি আজ জনগণের প্রশ্ন। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. শাহিদা রফিক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, মাহবুবুল হক নান্নু, খান রবিউল ইসলাম রবি ও শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন উপস্থিত ছিলেন।