সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের সাতকুড়িকান্দি মৌজায় গোচারণভূমি শ্রেণি পরিবর্তন করে ব্যক্তি বিশেষদের নামে বন্দোবস্ত করে গিলে খাওয়ার পাঁয়তারার ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ঘটনায় ডৌবাড়ী এলাকার খেটে খাওয়া কৃষক শ্রমিক ও গবাদি পশুপালনকারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার নাগরিক না হয়েও বহিরাগত বেশিরভাগ ব্যক্তি এখানকার ভূমি অবৈধ যোগসাজশে শ্রেণি পরিবর্তন করে দখল চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ও দাবি করেছেন সাতকুড়িকান্দি এলাকার সাধারণ মানুষ। সরজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, উপজেলার ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের সাতকুড়িকান্দি মৌজাধীন জেএল নং-২৫, খতিয়ান নং-০১, দাগ নং-১১৩ এ অন্তর্ভুক্ত ১২২.৭০০০ ভূমি গোচারণ শ্রেণির ভূমি হিসেবে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে স্থানীয় মানুষ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াসহ গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। শুধু সাতকুড়িকান্দিই নয় আশপাশের ইউনিয়নগুলোর পশুপালনেও উক্ত গোচারণ ভূমিটি ব্যবহার হয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক এলাকার চিহ্নিত কিছু ভূমিখেকো চক্রের সদস্য, স্থানীয় ঠিকাদার বিএনপি নেতা লোকমান উদ্দিন ও আজমত উল্লাহ গংসহ একটি চক্র ওই গোচারণভূমির জায়গা অবৈধ যোগসাজশে শ্রেণি পরিবর্তন করে তাদের নামে বন্দোবস্ত নেয়। এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর গোচারণভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে অবৈধভাবে বন্দোবস্ত নেয়ার ঘটনায় ফুঁসে ওঠে মানুষ। এ ঘটনায় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ওই বন্দোবস্ত বাতিল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেন। শুরু হয় মামলা পাল্টা-মামলা। সরকারের দেয়া প্রদত্ত নিয়মে পাওয়া গোচারণভূমির প্রথাগত অধিকার হারিয়ে সাতকুড়িকান্দিবাসী আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আদালতে মামলা চলে বিবাদী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে। সাতকুড়িকান্দি মৌজার উক্ত ভূমি ২৬/০৬/২০১৪ইং সালের পর্চায়ও গোচরণভূমি হিসেবে লিপিবদ্ধ দেখা যায়। এরই মধ্যে তারা আইনি প্রতিকারে একটি মামলা করেন। ভূমি গোচারণ থেকে শ্রেণি পরিবর্তন করে বোরো আবাদের খাস বন্দোবস্ত আনে ১৯৯১ সালে একটি স্বত্ব মামলায়। ১৯৯৮ সালে বন্দোবস্ত প্রাপ্তদের পক্ষে রায়ও হয়। পরবর্তীতে মামলা নং-১২৯/১৯৯৮ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্ত গোচরভূমির ভোগদখলকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী। এই মামলায় সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসীর দাবি গোচাণের পক্ষে রায় হয় ২০০৭ সালে। অতঃপর কতিপয় ভূমিখেকো আবার হাইকোর্টে আপিল করেন। এই মামলাটিও ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে খারিজ হয় এবং রায় হয় সাতকুড়িকান্দি গোচারণ দাবিদার গ্রামবাসীর পক্ষে। অবশেষে গোচারণভূমির ভোগদখলকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ডাকাতিকান্দির তাহির আলীর ছেলে লোকমান উদ্দিন, চারগ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন, বলেশ্বর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে ময়ুর ও নিহাইন গ্রামের সিকন্দর আলীর ছেলে মস্তাক গংদের বিরুদ্ধে ওই মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। কথা হয় গোচারণভূমির ব্যবহারকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামের কয়েকজন কৃষক এবং বাসিন্দা শহিদ মিয়া, ইসমাই আলী, আজির উদ্দিন, জমির উদ্দিন ও ইমাম উদ্দিনদের সঙ্গে। তারা জানান, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে ডাকাতিকান্দি, বলেশ্বর, নিহাইন, হাতিরকান্দি, চারগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের ভূমিখেকো একত্রিত হয়ে আমাদের ভোগ দখলীয় গোচারণভূমি অবৈধ যোগসাজশে বন্দোবস্ত নিয়ে দখলের পাঁয়তারা করেও নিতে পারেনি। এ বিষয়ে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই এবং আদালত আমাদের গোচাণের পক্ষেই রায় দেন। রায় এবং আমাদের দখল থাকা সত্ত্বেও ডাকাতিকান্দির লোকমান উদ্দিন গং ভূমিখেকোরা ওই ভূমি দখলে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। সাতকুড়িকান্দির ওই গোচারণভূমি শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন সহাকারী ভূমি কর্মকর্তা (মানিকগঞ্জ) নিত্যানন্দ জানান, ওই ভূমি গোচারণ শ্রেণির এবং সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী সুদীর্ঘকাল থেকে তাদের গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন বলে আমরা অবহিত। সম্প্রতি স্মারক নং-৬৮০২, তারিখ-১৭/১২/১৯৯০ সাল মূলে উক্ত ভূমি শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে মূলে একটি নমুনা কপি লোকমান উদ্দিন গংরা সরবরাহ করেছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, সাতকুড়িকান্দি বিষয়টি নিয়ে পরস্পর মামলা আদালতে বিচারাধীন। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।