বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, দেশে আইন থাকা সত্ত্বেও তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় সবার আস্থা কমে যাচ্ছে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও এটিএন বাংলার যৌথ আয়োজনে ‘নিপীড়ন বিরোধী’ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বাছাইকৃত কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ফেনীর সাহসিকা নুসরাত জাহান রাফিকে উৎসর্গ করা এই প্রতিযোগিতার স্লোগান হচ্ছে- ‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি, তুমিই প্রতিবাদ’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নুসরাত একটি প্রতীক। এক প্রতিবাদী মেয়ে। নুসরাতের মতো আর কোনো ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখছি প্রচলিত ব্যবস্থায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয় না, বাদীকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, সরকারি লোকেরাই বাদীকে বিরক্ত করছে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। জনমনে আস্থা অর্জনের জন্য অবশ্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। অন্যায় করে পার পাওয়ার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যায়কারীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা দৃশ্যমান দ্রুত সময়ে করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জনগণকে চাপে রাখতে বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর মতো আইন পেলেও আমরা এখনও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে সুস্পষ্ট কোনো আইন পাইনি। নিপীড়নের শিকার নারীরা আইনের আশ্রয় না পেলেও যে নিপীড়ন করছে, সে আইনের প্রশ্রয় পাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নির্যাতনকে প্রকট করে তুলছে। নিরাপত্তা বাহিনী, প্রশাসন, কারো কাছেই নিপীড়নের শিকার নুসরাত বিচার না পেয়ে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী হওয়ায় তাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা হয়। নির্যাতিত নারীরা যদি সঠিক সময়ে বিচার পেত তাহলে নুসরাতের মত ঘটনা আমাদের আর দেখতে হতো না। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই শুধু ৫২টি ধর্ষণ ও ২২টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৯৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ মতে, গত বছর ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও শারিরীক নির্যাতনের কারণে ২৭১ জন শিশু মারা গেছে।বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ‘সামাজিক অবক্ষয় নুসরাত হত্যার অন্যতম কারণ’ শীর্ষক বিষয়ে উদ্বোধনী দিনে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের পরাজিত করে লাল মাটিয়া মহিলা কলেজ বিজয়ী হয়। উদ্বোধনী প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে যথাক্রমে দুই লক্ষ, এক লক্ষ ও পঞ্চাশ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।