নিউজ ডেস্ক:: সিলেট নগরীর নিত্য দিনের সমস্যা হকার। ফুটপাত থেকে শুরু করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলোও তাদের দখলে। যার ফলে নগরে দিন দিন বাড়ছে যানজট। হাকার উচ্ছেদের জন্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছেন। হকারদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি প্রয়োগ করলেও কোন কিছুই কাজে আসছেনা। প্রতিটি অভিযানেই ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। অভিযানের সময় হকাররা উচ্ছেদ হলেও অভিযানের ৫/৭ মিনিট পরে আবার হকাররা তাদের জায়গা দখল করে নেয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বার বার মেয়র হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ হল এসএমপির কোতোয়ালি থানার বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি। ওই ফাঁড়ির কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা তাদের নির্দিষ্ট লোকজনের মাধ্যমে হকার বসিয়ে থাকে। হকারদের সেল্টার দিয়ে তারাই ফুটপাতে বসায়। এতে মোটা অংকের টাকা ঢুকে ওই অসাধু কর্মকর্তার পকেটে। পুলিশের অধীনে হকারদের নেতৃত্বে দিচ্ছেন বহিস্কৃত হকার নেতা রকিবের লোকজন, রাহীন, লোকমান, সুমন, রুমন। তারা হকার বসিয়ে টাকা আদায় করে। প্রতিদিন হকার থেকে অর্ধলক্ষ টাকারও বেশী চাঁদা আদায় করা হয়। তার একটি অংশ যায় পুলিশের পকেটে আর বাকী অংশ তারা পায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় লাইনম্যান লোকমান। হাকার ও বন্দরবাজার ফাঁড়ির চাঁদা উত্তোলন করে। লোকমান বন্দবাজার পুলিশ ফাঁড়ির নাম করে চাঁদা তুলে।একাধিক সূত্র জানায়, লোকমান প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত স্থায়ী হকার, ভ্যান-আতা ভ্যান, বারোয়াদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। জনপ্রতি স্থায়ী হকারের কাছ থেকে ৩০ ও ভাসমানদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে আদায় থাকে। সব মিলিয়ে লোকমানের দৈনিক ২০ হাজারেরও বেশি চাঁদা উত্তোলন হয়। আর এসব টাকার ভাগ বাটোয়ার থেকে বাদ পড়েননি শাসকদলের নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জজকোর্ট এলাকার এক হাকার ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন তাদের লাইন অর্থাৎ তালতলা থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত রাহীন বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের কথা বলে স্থায়ী হকারদের ২০ ও ভাসমানদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে আদায় করে। টাকা না দিলে শুরু হয় হকারের উপর নির্যাতন। হকারদের সাথে থাকা মালামাল নিয়ে যায় তারা।রাহীনের দৈনিক আদায় হয় ১০ হাজার টাকা, অর্ধেক যায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বাকিটা রকিবের কাছে। রুমন-সুমন তারা দুই ভাই হকার নেতা রকিবের ভাগনা হওয়ার সুবাদে তাদের বিরুদ্ধে কোন হকার কথা বলার সাহস পায়নি। তারা দাপটের সাথে জেলা পরিষদের সামনের মাছ বাজার বসিয়ে তাদের দখলে নিচ্ছে। আর এই সব মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক জনপ্রতি ৩ শত টাকা করে আদায় করে তারা। জেলা পরিষদের সামনে প্রায় ৩০ জনের বেশি মাছ ব্যবসায়ী বসেন। শুধু মাছ ব্যবসায়ীরা নয় জেলা পুলিশ সুপারের গেইটের সামন থেকে সার্কিট হাউজের সামন পর্যন্ত পরো হাকার তারা দুই ভাইয়ের নিয়ন্ত্রনে। এসব হকার থেকেও জনপ্রতি ৩০ টাকা করে আদায় করে তারা। সব মিলিয়ে তাদের দৈনিক ইনকাম ২০ হাজারেরও বেশী। এ ব্যাপারে লাগামহীন চাঁদা আদায় করে তারা হকারদের সুযোগ করে দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই চলে হকার বসা আর চাঁদা আদায়।এ ব্যাপারে চাঁদা উত্তোলনকারীদের সাথে আলাপ করলে তা সত্যতা স্বীকার করে বলে, বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও হকার নেতাদের নির্দেশে তারা টাকা উত্তোলন করছে। তবে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই কামাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি ফাঁড়িতে নতুন এসে যোগদান করেছেন। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে পুলিশের নামে কেউ চাঁদা আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।