নাচের প্রকৃত শিল্পীদের নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো কাজ করে না। তারা জনপ্রিয় বা পরিচিত মুখের নামে অন্যদের দিয়ে নাচের অনুষ্ঠান করায়। যার কারণে প্রকৃত শিল্পীদের জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে। দেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নাচের অবস্থান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এভাবেই বললেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে নৃত্যশিল্পীদের গুরুত্ব কম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা নৃত্যশিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করায় না। মাঝে মধ্যে যে অল্প কিছু অনুষ্ঠান করে সেখানেও বাজেট সংকট থাকে। একটা সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন নিয়মিত নৃত্যশিল্পীদের প্রমোট করতো। এখনো তারা করে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে আমাদের এখন অনেক টিভি চ্যানেল। কিন্তু তারা নৃত্যশিল্পীদের বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। শিল্পের প্রতি যদি টিভি চ্যানেলগুলোর প্রেম ও দায়িত্ববোধ থাকতো তাহলে তারা এমন কখনো করতো না। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কি? নীপা বলেন, এই বিষয়ে বলতে বলতে আমরা অনেক ক্লান্ত। এখন আর বলতে ইচ্ছে করে না। টিভি চ্যানেলগুলো যাদেরকে নিচ্ছে তারা নাচের নামে অনেক সময় অশ্লীলতা প্রকাশ করে। টিভি চ্যানেলের বাইরে মঞ্চে নাচের গুরুত্ব কেমন এই সময়ে? এ প্রসঙ্গে এ নৃত্যশিল্পী বলেন, মঞ্চে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু এসবের যদি প্রচার-প্রচারণা না থাকে তাহলে মানুষ জানবে কি করে? সংবাদপত্রগুলো কতজন প্রকৃত নৃত্যশিল্পীর ইন্টারভিউ প্রকাশ করছে? এ সংখ্যা খুব কম। যদি প্রচার-প্রচারণা নিয়মিত হতো তাহলে আমাদের নৃত্যশিল্পের অনেক প্রসার হতো বলে আমি মনে করি। নতুনদের মধ্যে নাচের প্রতি আগ্রহ কেমন দেখতে পান? নিপা বলেন, ঢাকার মধ্যে খুব ভালো। তবে ঢাকার বাইরে ভালো প্রশিক্ষকের অভাব আছে। নাচের ভালো প্রশিক্ষকদের বেশিরভাগ ঢাকামুখী। বিভিন্ন জেলাতেও যদি ভালো প্রশিক্ষক থাকতো তাহলে নৃত্যশিল্পের ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলা যেত। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের নৃত্যশিল্প আরো অনেক দূর যাবে। আমাদের নৃত্যশিল্পীরা এখন দেশের বাইরেও কাজ করছেন নিয়মিত। জনপ্রিয় এ নৃত্যশিল্পীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, শোবিজের অন্য মাধ্যমগুলোতে অনেকেই শখের বশে আসেন। পরববর্তীতে সেটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। নৃত্যশিল্পকে এ সময়ে পেশা হিসেবে কি নেওয়া যায়? নীপা কিছুটা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এই পেশাতে শোবিজের অন্য মাধ্যমগুলোর মতো অর্থ পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের এখানে সবাই সহজে সব কিছু পেতে চায়। সহজে যারা পেতে চায় তাদের জন্য এই পেশা না। যারা পরিশ্রম ও কষ্ট করতে পারবে তারা হয়তো এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারে। আমার অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এটাকে ভালোবাসি বলেই অন্য কোনো পেশাতে নিজেকে জড়াইনি। অনেক কষ্ট ও ধৈর্য্যরে পর আজ আমি এতটুকু আসতে পেরেছি। সফল কতটুকু হয়েছি সেটা বলবো না। এদিকে এই নৃত্যশিল্পী এখন ব্যস্ত তার সংগঠন নৃত্যাঞ্চলের কার্যক্রম নিয়ে। নভেম্বরে নতুন কিছু নিয়ে মঞ্চে আসতে চান বলে জানান তিনি। এর মধ্যে থাকবে শিশুদের নিয়ে একটি কাজ। তার ভাষ্য, আমাদের শিশুরা মঞ্চে বড়দের গান কিংবা অন্য বিষয়গুলো নিয়ে পারফমেন্স করে। আমার এটি হবে গতানুগতিকতা থেকে ভিন্ন। সম্পূর্ণ শিশুদের উপযোগী করেই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছি। আমি চাই কিছু ভালো ছেলে-মেয়ে তৈরি করতে। যারা নাচকে ভালোবাসে। সম্মান করে। এখন সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।