মূলধন সংকটে আরো তিন প্রতিষ্ঠান

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

চরম সংকটে থাকা লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) বন্ধ ঘোষণার পর মূলধনের তীব্র সংকটে পড়েছে আরো ৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এসব    প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের অন্য লিজিং কোম্পানিতেও একই রকম চাপ সৃষ্টি হয়েছে। টাকা উঠিয়ে নিতে চাচ্ছেন ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিরা। এদিকে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের বৈরি পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা। বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। ওইসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এখন বাকি ২৯টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেন এমন অবস্থা না হয় সে লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।আইপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা আমরা বিনিয়োগ করেছি। যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পুরো খাতের বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমরা চাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য যাতে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি না হয়। জানা গেছে, লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমানতের টাকা নিয়ে চলছে হরিলুট। লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর্থিক দুরবস্থায় আমানতের টাকাও ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এজন্য যা যা করা দরকার আইন অনুযায়ী তা-ই করা হচ্ছে। আমানতকারীরা যন কোনো বিপদে না পড়ে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সজাগ রয়েছে।আইডিএলসি’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, আর্থিক খাতের তারল্য ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছি। সেটা হতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো স্কিমের মাধ্যমে অথবা শক্ত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের বিনিয়োগের মাধ্যমে। বিআইএফসি: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুরবস্থায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। নানা অনিয়মে বিতরণ করা ঋণ ফেরত পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে হচ্ছে খেলাপি। খোয়া যাচ্ছে মূলধন। নানা সংকটে আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এসব অনিয়মের কারণে বিআইএফসি-কে অবসায়ন করতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে অবসায়নের মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপে দেয়া হয়েছে ঋণ। এখন তা ফেরত আসছে না। ফলে বিআইএফসির মোট ঋণের ৯৬ শতাংশই খেলাপি। কোনো পরিচালন আয় না থাকায় প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। ন্যূনতম ১০০ কোটি টাকার মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিআইএফসিতে রয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকা। এ কারণে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পর্ষদ ভেঙে দিয়েও কোনো ফল আসেনি। রাজনৈতিক প্রভাবে অনিয়ম করেও পার পাচ্ছেন সাবেক-বর্তমান পরিচালকগণ।ফার্স্ট ফাইন্যান্স: সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হলো ফার্স্ট ফাইন্যান্স। পরিচালককে ঋণ প্রদানের অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনিয়ম, লাগামহীন খেলাপি ঋণ এবং অর্থ সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি এখন সময়মতো আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না। নানা অনিয়মের অভিযোগে পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও কোনো লাভ হয়নি। এখন ধুঁকে ধুঁকে শেষ হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৯.৬৫ শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির মূলধন কম রয়েছে ২০ কোটি টাকা। সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) মতো টাকাও নেই প্রতিষ্ঠানটির। ফলে গত বছর ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। সমপ্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, তাদের এক পরিচালককে ঋণ দিতে অনিয়ম করা হয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত ফার্স্ট ফাইন্যান্স দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ফলে কোম্পানিটি ‘জেড’ গ্রুপের তালিকায় রয়েছে। প্রিমিয়ার লিজিং: নানা সংকটের কারণে সমস্যায় পড়েছে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের ২৮.৭৮ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মূলধন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ হিসাব বছরে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। সময়মতো আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না তারা।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গ্রাহককে প্রলোভন দেখিয়ে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে, আবার ঋণ বিতরণে কোনো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে না। এতে ঋণ ফেরতও আসছে না। খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের আর্থিক খাত এখন ভোগান্তিতে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে গ্রাহক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখবে না। যা আগামীতে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি করবে। একটি প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া যারা খারাপ অবস্থায় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us