২ মিনিটের কিলিং মিশন, মূল ভূমিকায় রিফাত ফরাজী

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

বরগুনায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ হত্যার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ঘটনাস্থলের সামনের একটি বাসা  উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় হত্যার মূল ভূমিকায় ছিল মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজি। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২৬শে জুন বুধবার সকাল থেকেই বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নানা পরিকল্পনা করতে থাকে ‘বন্ড ০০৭’ গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। হঠাৎ কলেজ থেকে তারা জোর করে রিফাত শরীফকে বের করে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিন সরাসরি ১৫ থেকে ২০ জন জড়িত ছিল। তবে কিলিং মিশনে মূল ভূমিকা পালন করে দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি। ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের সদস্যরা মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই তাদের মিশন শেষ করে চলে যায়। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পরিকল্পনাকারী নয়ন বন্ড হলেও কিলিং মিশনে মূল ভূমিকা পালন করে এ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি। ঘটনার দিন সকাল ১০টায় রিফাত শরীফ তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নিকে নিতে সাদা একটি মোটরসাইকেলে করে কলেজে আসে। সকাল ১০টা ৩ মিনিটে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের প্রধান ঘাতক রিফাত ফরাজি ছয় থেকে সাত জনকে নিয়ে কলেজ গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। ২ মিনিট পরে আরো দুই থেকে তিন জনকে কলেজে পাঠায় সে। সকাল ১০টা ৯ মিনিটে দুই থেকে তিন জনসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তার উল্টো পাশে অবস্থান নেয়। ১ মিনিট পরে ঘাতক রিফাত ফরাজি গেটের কাছে এসে আরো দুটি ছেলেকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে উল্টো দিকে পাঠায়। সকাল ১০টা ১২ মিনিটে কলেজ থেকে বেরিয়ে রিফাত গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করে। সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে ঘাতক রিফাত ফরাজি নিহত রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে এসে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের সদস্যদের সহায়তায় জোর করে নয়ন বন্ডের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই তাকে কিল ঘুষি মারতে থাকলেও রিফাত ফরাজি ও একজন দৌড়ে গিয়ে তিনটি রামদা নিয়ে আসে। রিফাত ফরাজির দুই হাতে থাকা দুটি দায়ের একটি নয়নকে দেয় ও আরেকটি দিয়ে নিজেই কোপাতে শুরু করে।এদিকে পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, ৬ জন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ হত্যায় যুক্ত ছিলেন অন্তত ২০ জন। বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়নের গড়ে তোলা ফেসবুক গ্রুপ ‘বন্ড ০০৭’ এ বার্তা পেয়ে গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্য হত্যার ঘটনাস্থলে এসেছিল বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন গ্রেপ্তারকৃতরা।এছাড়া তানভীর, অলিউল্লাহসহ অন্যরা তাদের জবানবন্দিতে বলেছে, হামলার সময় ‘বন্ড ০০৭’  গ্রুপের অন্তত ২০ জন ছোট দলে ভাগ হয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়। ঘটনার সময় পথচারী বা রিফাত শরীফের দলের কেউ যেন এগিয়ে আসতে না পারে, তা সামলানোর দায়িত্ব ছিল একটি দলের। অন্য আরেকটি দল নয়ন বন্ড, রিফাত-রিশান ফরাজিসহ অন্য হামলাকারীদের মোটরসাইকেলগুলো পাহারা দেয়, যাতে করে হামলার পরে সবাই নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে।কলেজের সিসিটিভির ফুটেজ গায়েবএদিকে বরগুনা সরকারি কলেজের ভেতরে নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম পেটানোর সময় সিসি ক্যামেরায় ছবিগুলো থাকার কথা। কলেজের অধ্যক্ষের দাবি ঘটনার দুইদিন আগে বজ্রপাতে সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে গেছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ দিনের পর দিন কলেজ ক্যাম্পাসে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের অপরাধ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। এদিকে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজ মাদক মুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, বহিরাগত মুক্ত। কলেজের বাইরে কোথায় কি ঘটে এইটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না।স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, কলেজের সামনে মেয়েদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হতো। ধামা চাপা দেয়া হয়েছে রিফাতকে কোপানোর ঠিক আগ মুহূর্তের ঘটনা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যারা রিফাতকে কুপিয়েছে তাদের বাইরেও ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপটি কাজ করেছে কলেজের ভেতরে। ওইদিন নোটিশ বোর্ডের সামনে থেকে তারা রিফাত শরীফকে মারতে মারতে কলেজ গেটের বাইরে নিয়ে যায়। আর সেখানেই পরবর্তীতে নয়ন, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীসহ সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে।অথচ নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম যেখানে পেটানো হয়েছে, সেখানে লাগানো আছে দুটি সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরা দুটিতে অবশ্যই ধরা পড়ার কথা কলেজ ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা। তবে অধ্যক্ষ জানান, ঘটনার দুদিন আগে বজ্রপাতে কলেজের সব ক্যামেরা বিকল হয়ে যায়।অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ক্যামেরাগুলো সব ভালোই ছিল। ২৪ তারিখে বজ্রপাতের কারণে মনিটরটা নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে কলেজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা বলছে, বজ্রপাতের কোনো ঘটনাই ঘটেনি সে সময়। শিক্ষার্থীরা বলেন, গত এক মাসেও আমরা কোনো বজ্রপাতের আওয়াজ শুনিনি, কলেজে আরো আগেও যদি কোনো বজ্রপাত হতো, তাহলে তা আমরা শুনতে পেতাম। কিন্তু এখানে কোনো বজ্রপাত হয়নি। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ও বাকি আসামিদের ধরতে অনেক বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, তদন্ত চলমান আছে। কার তথ্যের ভিত্তিতে কাকে ধরা হবে না হবে, সেগুলো এখানে বলে দিলে আমি আসামি ধরবো কি করে? তারা তো আমার নজরদারির বাইরে চলে যাবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us