ট্রাক চাপায় হাত হারানো কলেজছাত্র আইসিইউতে

মানবজমিন প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০১৯, ০০:০০

সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহীতে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় হাত হারানো কলেজছাত্রের অবস্থার অবনতি হয়েছে। তবে তিনি কথা বলতে পারছেন। বর্তমানে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।  এদিকে, কলেজছাত্র ফিরোজ সরকারের হাত বিচ্ছিন্নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনের  সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমানসহ বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর কাটাখালীতে যাত্রীবাহী বাস ও একটি ট্রাক পাশাপাশি অতিক্রম করার সময় দুই যানবাহনের চাপায় ফিরোজ সরদার নামের ওই পরীক্ষার্থীর ডান হাত কনুই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাত পড়ে থাকলেও ফিরোজকে নিয়ে বাস চলে যায় বাস টার্মিনালে। রাস্তায় হাত পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা কাঁটাখালী থানায় খবর দেয়। তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে পারলে হাত জোড়া লাগানো যেতে পারে এই আশায় কাঁটাখালী থানার পুলিশ সদস্যরাও হাত উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে বাস থেকে নামিয়ে ফিরোজকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাত পৌঁছানোর পর চিকিৎসক বলেন, এ হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।হাত হারানো ফিরোজ সরদার রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম মাহফুজ আর রহমান। বাড়ি বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলায়। রাজশাহী কলেজে তার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার ছুটিতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার পরীক্ষা দিয়েই তিনি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। বাসে সহপাঠী বীরেশ্বর চন্দ্র প্রামাণিক তার সঙ্গে ছিলেন। বীরেশ্বর বলেন, তার বাড়ি বগুড়ায়। তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়া থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠেছেন। নন্দিগ্রামে ফিরোজ একই বাসে ওঠেন। কিন্তু ফিরোজ সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে পিছের দিকে সিট পান।তাই বাসের মধ্যে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে থাকা কাঁটাখালী পৌর এলাকায় এসে বাসটি খুবই বেপরোয়া চলছিল। হঠাৎ একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। একটা বিকট শব্দ শুনতে পান। এর পর পরই সবাই চিৎকার শুরু করেন- হাত পড়ে গেছে। কিন্তু কার হাত, তা তিনি তখন বুঝতে পারেননি। বাসটি রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী থামলে দেখেন তার বন্ধু ফিরোজকেই নামানো হচ্ছে। তার ডান হাত বাহু থেকে পড়ে গেছে। সেখান থেকে তাকে তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে তাকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এনে ভর্তি করা হয়। এ সময় অস্ত্রোপচারের জন্য ফিরোজকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর তার অস্ত্রোপচার শেষ হয়। কিন্তু অবস্থার ক্রম অবনতি হওয়ায় ফিরোজকে বর্তমানে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে।রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বি কে দাশ বলেন, হাত হারানো ফিরোজের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। তবে সে কথা বলতে পারছেন বলে জানান এই চিকিৎসক। রাজশাহীর কাঁটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে কাঁটাখালী পৌরসভার সামনে রাজশাহী-নাটোর সড়কে একটা হাত কেটে পড়ে থাকার খবর পান। পরে থানা থেকে ফোর্স পাঠানো হয়। উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম, শাহীন ও কনস্টেবল হাফিজ ও মিজান-ফিরোজের বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় গতকাল সকালে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বাস ও ট্রাকটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে শনাক্ত করে দুটি যানবাহনের চালক ও হেলপারদের আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ফিরোজ তার কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র। এ ঘটনায় তিনি ফিরোজের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তার সহপাঠীদের শান্ত থাকতে বলেন এবং কলেজের পক্ষ থেকে ফিরোজের চিকিৎসায় সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন কলেজ অধ্যক্ষ।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us