ঢাকার উত্তরা থেকে আসা আফসি নামের এক টাইগার ভক্ত চমকে উঠলেন! বললেন, ‘এখানে মাঠের বাইরে আমাদের পতাকা, টুপি, মাফলার বিক্রি হয়?’ তার চমকের আরো কিছুটা বাকি ছিল। যখন তিনি কিনতে গেলেন আরো অবাক। যিনি বিক্রি করছেন তিনি একজন বিলেতি নারী। উরস্টারশায়ারের বাসিন্দা। পিঠে জড়িয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের বিশাল এক পতাকা। সামনে থেকে না দেখলে যে কেউ একজন বাঙালি বলে ভুল করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ভেন্যুর বাইরে তাকে দেখা গেছে এইভাবে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা হিসেবে। কথা বলতে চাইতেই বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসলেন। জানালেন নিজের নাম চেলসি। বললেন, ‘আমার বাংলাদেশের পতাকা, টুপি, বিক্রি করতে খুব ভালো লাগে। এখানে বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে দেশের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা। ওরা জানে কীভাবে দেশকে সমর্থন দিতে হয়। দেখ মাঠের বাইরে ভারত ছাড়া এমন উন্মাদনা আছে শুধু বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে। তাই আমি শুরু থেকে ঠিক করেছি যে আমি টাইগারদের সমর্থন দিবো আর ওদেরই পতাকা বিক্রি করবো।’ সবচেয়ে অবাক করা কথা হলো চেলসি এত বাংলাদেশের পতাকা-টুপি কোথা থেকে জোগাড় করলেন? বানিয়েছেন নাকি তাকে কেউ দিয়েছে বিক্রি করার জন্য! অকপটে জানালেন, তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরে ঘুরেই কিনেছেন এই সব পতাকাসহ বাংলাদেশের সমর্থকদের পছন্দের বিভিন্ন সামগ্রী। বিশেষ করে তিনি এই সব পতাকা কিনতে গিয়েছিলেন ইস্ট লন্ডনে বাঙালি পাড়ায়। চেলসি বলেন, ‘আসলে যখন আমি ঠিক করেছি বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করবো তখনই তা সংগ্রহ করতে শুরু করি। আমি এই জন্য লন্ডনেও গিয়েছি। এ ছাড়াও এখানে আমাকে অনেকেই সাহায্য করেছেন এই সব জিনিস সংগ্রহ করতে। দেখো তোমাদের দেশের সমর্থকরা অনেক পতাকা কিনে নেয়।’ বিদেশিনী এই ফেরিওয়ালা শুধু বাংলাদেশের পতাকাই বিক্রি করেন না; খবর রাখেন টাইগার ক্রিকেটেরও। চিনেন সাকিব, তামিমদের। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু তোমাদের খেলারও খোঁজ রাখি। আজ জিতলে তোমাদের জন্য অনেক ভালো হবে। আশা করি তোমরা জিতবে। তবে তার জন্য সাকিব, তামিমকে ভালো খেলতে হবে।’ইংল্যান্ডে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশি সমর্থকদের উন্মাদনাটা চোখে পড়েছে সবারই। ব্যতিক্রম হয়নি টনটনেও। প্রায় এক বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন এখনকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাই সকাল থেকে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে সমারসেট স্টেডিয়ামে হাজির। পরিবার নিয়ে আসা সিলেটের সোলাইমান শেখ ও নোয়াখালীর মানাফ হাসেম বলেন, ‘আজ মনে হচ্ছে ঈদের দিনের মতো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে সবাইকে নিয়ে বেরিয়েছি। এখানে ৩০ বছর ধরে আছি কোনো দিন জাতীয় দলকে এই মাঠে খেলতে দেখেনি। তাই এক বছর আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। আজ মনে হচ্ছে বাংলাদেশেই আছি।’ হ্যাঁ, ইংল্যান্ডে মাশরাফিদের এক ম্যাচেও নিজেদের একা ভাবতে হয়নি। ভাবতে দেয়নি দেশের ক্রিকেট পাগল মানুষগুলো। প্রতিটি ম্যাচের মতো এদিন বিসিবি পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিও হাজির মাঠে। কাউন্টি গ্রাউন্ডে ঢোকার পথে জানিয়ে গেলেন তার প্রত্যাশার কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সঠিক পথেই আছি। বিশ্বাস রাখতে হবে মাশরাফির দলের ওপর। তারাই কিন্তু বাংলাদেশকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তাই সবার প্রতি আবার আবেদন হারজিত থাকবেই। কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না।