১৮ বছর ধরে নিজ ঘরে পরবাসী দেলোয়ার হোসেন

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোলে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিচারের রায়ে নিজের স্ত্রীকে তালাক না দিয়েও ১৮ বছর ধরে নিজ ঘরে পরবাসী দিন যাপন করছেন স্বামী দোলেয়ার হোসেন সেন্টু। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমজোয়ান গ্রামে।দোলেয়ার হোসেন সেন্টু (৪০) অভিযোগ করেন, ছোটকালে পিতা মকবুল হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবন কাটতো তার। কোনো রকমে গ্রামে সামান্য খাস জমিতে মাটির আঁচড়া ঘরে বাস করে আসছিলেন । ২০০০ সালে একই গ্রামের বিত্তশালী ইলিয়াস মেম্বারের মেয়ে সোফিয়া বেগম ভালোবাসার টানে পিতার ধনসম্পদ ত্যাগ করে দিনমজুর দেলোয়ারের ঘরে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে একরাতে চলে আসে। সোফিয়াকে তার বাপের বাড়িতে ফেরাতে না পেরে নিরুপায় দেলোয়ার পরের দিন নওগাঁ কোর্টে গিয়ে দু’জন ইসলামী শরীয়া মতে রেজিস্ট্রি বিয়ে করে বাড়ি ফিরে আসেন।এরপর বিত্তশালী ইলিয়াস মেম্বার তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে কোর্টে মামলা করেও ক্ষান্ত হননি। কয়েক দফায় দেলোয়ারকে মারপিট করে। কিন্তু তাতেও সোফিয়া পিতার বাড়িতে যেতে রাজি হয়নি। তাদের সংসারে জন্ম নেয় পুত্রসন্তান শাহীন। সোফিয়ার পিতার ডাকে দিনে দিনে গ্রাম্য মাতব্বরদের হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। শুরু হয় ঠিক সিনেমার মতো ভিলেনি চাল। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সামান্য কথাকাটাকাটি নিয়ে বসে গ্রাম্য সালিশ। সেখানে উপস্থিত হন ওই গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর ছেলে আলহাজ হারেজ উদ্দীন, নওশাদ, মৃত ওহেদ মণ্ডলের ছেলে আবদুস সাত্তার, মৃত সাইফুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে বর্তমান নাচোল ইউপি’র চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম, তৎকালীন ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমানসহ অনেকে। সালিশে মেয়ের পিতার পক্ষের লোকজনের যোগসাজশে শোফিয়ার কথিত ভরণপোষণ না দেয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়ার কারণে মাতব্বররা বিচারের রায় ঘোষণা করেন-স্ত্রী সোফিয়া দেলোয়ারের ঘরেই থাকবে। কিন্তু দেলোয়ার কোনদিন স্ত্রীর অধিকার পাবে না”। এ রায় না মানলে দেলোয়ারকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।এরপর হতে একই বাড়িতে স্ত্রী সোফিয়া বেগম বসবাস করলেও তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবে না স্বামী দেলোয়ার হোসেন। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহিত স্ত্রীকে ঘরে রেখে নিজে ১৮ বছর ধরে বারান্দায় শুয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে তাকে।চোখের সামনে ওরশজাত ছেলে শাহিন (২০) তার মায়ের সাথে বসবাস করলেও ১৮ বছর ধরে পিতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। স্ত্রী সোফিয়া ও ছেলে শাহিনের দাবি স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে না পারায় এমন রায় দিয়েছে সালিশদাররা। এ ঘটনার জন্য দায়ি করেছে পরস্পরকে। ১৮ বছর ধরে মাতব্বরদের রায় ভাঙতে না পেরে পাগলপ্রায় দেলোয়ার। দেলোয়ারের দাবি-মাতব্বরদের রায়ের কারণে তার জীবনে এমন দশা। দেলোয়ারের স্ত্রী সোফিয়া বেগম জানায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বা ছাড়াছাড়ি হয়নি। আমার ভরণপোষণ না চালনোর জন্য সালিশদাররা আমাদের মাঝে এমন অবস্থা করে রেখেছে। সলিশদার হারেজ উদ্দিন জানান, স্বামী-স্ত্রীর তালাক হয়নি। স্ত্রীকে মারপিট ও ভরণপোষণ চালাতে না পারার কারণে ওই রায় দেয়া হয়েছিল।  অপর সালিশদার সাবেক মেম্বার হাফিজুর রহমান ও বর্তমান নাচোল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জানান, মরহুম বেলাল চেয়ারম্যান তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিরোধটি নিষ্পত্তি করার ভার দিয়েছিলেন আমাদের উপর। বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। তবে ভুক্তভোগী আমার নিকট বিচারপ্রার্থী হলে সুবিচার করার চেষ্টা করবো।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাচোল থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বলেন, কোনো ব্যক্তি থানায় কেও অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us