জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের মাঝে শান্তি, সম্প্রীতি আর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের শিক্ষা। আমাদের প্রিয়নবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। মানব চরিত্রে যত প্রকারের মহৎ গুণ থাকতে পারে তার চরিত্রে ও আদর্শে সে সমস্ত গুণ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
ধর্ম প্রচারই বলুন আর পারিবারিক জীবনের অন্য কাজই বলুন না কেন মহানবি (সা.) তার স্বীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আদর্শের উৎকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। এজন্যই তিনি আসমান ও জমিনে সর্বত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হিসেবে স্বীকৃত। নিজ ধর্ম ইসলাম প্রচার ক্ষেত্রে তিনি কখনও জোর জবরদস্তি করেন নি বরং কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী তার (সা.) অনুসারীদের প্রতি নির্দেশ ছিল ‘তোমরা কারো মতের ওপর বল প্রয়োগ করো না (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)। বরং একথা বলবে, তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন আর আমার জন্য আমার দীন (সুরা কাফেরুন, আয়াত: ৬)।
ধর্ম পালনের ব্যাপারে প্রত্যেকের স্বাধীন ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবে। মানবতা লঙ্ঘন হয় যুদ্ধক্ষেত্রে এমন কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করবে না। যুদ্ধ বন্দীগণের প্রতি সহনশীল হবে। স্বীয় আদর্শের উৎকর্ষতার মাধ্যমে অন্য ধর্মাবলম্বীদের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করবে।
কেননা বল প্রয়োগে কখনো স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এই নীতিই ছিল আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের।
প্রকারান্তরে এ আদর্শের ওপর দৃঢ় প্রত্যয় ছিল বলেই সেদিন যে বিধবা মহানবির (সা.) কাছ থেকে শহর ছেড়ে পালিয়ে স্বীয় ধর্ম রক্ষার চেষ্টা করেছিল আর সেই বিধবারই ভারী বোঝা বহন করে কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে মহানবি (সা.) বলেছিলেন, হে বিধবা মা! আপনি যার ভয়ে নিজ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আমিই সেই মুহাম্মদ। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দয়ার্দ্র ও অনুপম আদর্শের নমুনা দর্শনে বিধবা বিস্মিত হলেন, আপ্লুত হলেন, ইসলাম প্রচারকের অনন্য বৈশিষ্ট্যের রূপ দেখে বিমুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, তুমিই যদি সেই মুহাম্মদ হয়ে থাকো তাহলে আমি তোমার প্রতি ইমান আনলাম।
তলোয়ার হাতে যে বেদুইন হজরত রাসুল (সা.)কে হত্যা করতে এসেছিল সেই নরাধম ঘাতককেও তিনি (সা.) সেদিন ক্ষমা করে দিয়েছিলেন অকাতরে। শুধু তা-ই নয়, মুসলমানদের প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে যারা মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে, পৃষ্ঠদেশে জ্বলন্ত আগুনে ছেঁকা দিয়েছে, নাকে রশি ঝুলিয়ে তপ্ত বালুকায় পশু তুল্য আচরণে টানা-হেঁচড়া করেছে, কাউকে বা শহিদ করে তার কলিজা চিবিয়েছে, এমন নির্মম নিষ্ঠুর হৃদয়ের ইসলাম বিদ্বেষীকেও রহমতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা করে দিয়েছিলেন নিঃশর্তে।