নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব গ্রহণকে স্বাগত জানাই। এই কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ভার এই কমিশনের ওপর থাকবে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক।
সংবিধান অনুযায়ী ইসির যেকোনো কাজে সহযোগিতা করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। সংবিধানে বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ ইসিকে সহায়তা করতে বাধ্য। ইসি তাদের সহায়তা চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করবে। উল্লেখ্য, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’
যারা নতুন কমিশনে এসেছেন, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনাম ও মর্যাদাসহ কার্যক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। নিঃসন্দেহে তারা একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাবেন। দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের প্রতি কেমন হবে, সেটি নির্ভর করবে তাদের ভূমিকার ওপর। যদি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, তাহলে দেশের মানুষের কাছে তারা ইতিহাস হয়ে থাকবেন।
আর যদি খারাপ তথা বিতর্কিত কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়, তাহলে দেশের মানুষের কাছে তারা নিন্দিত হবেন।
কিন্তু একটি ভালো নির্বাচনের জন্য ইসির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে মাথায় রেখে তাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক এবং জনমনে নির্বাচন নিয়ে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার লড়াইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনকে প্রমাণ করতে হবে তারা কোনো বিশেষ মহলের আনুগত্য নয়, বরং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন তা প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত থাকতে ব্যর্থ হয়। এই প্রেক্ষাপটে কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকেও যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে একেবারে কম ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে এ পর্যন্ত দেশে যতগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তার খুব কম কমিশনকেই তাদের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সম্ভবত সে জন্যই বেশির ভাগ কমিশনের কার্যক্রমই বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়নি। নির্বাচনের সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের মন জুগিয়ে চলার কারণেই মূলত নির্বাচন কমিশন বিতর্কমুক্ত থাকতে পারে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতা পরিবর্তন ছাড়া আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আশা করা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কমিশনকে স্বাগত জানালেও দলগুলোর আস্থা অর্জনে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে হবে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বা মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।