শিশু ও কিশোরদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ একটি দেশের সামগ্রিক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এ বিষয়টির যতটুকু গুরুত্ব থাকার কথা আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বহু পিছিয়ে রয়েছি।
জনমিতিক পূর্বানুমানের ভিত্তিতে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ কিংবা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জন করার সময় এই শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। অর্থাৎ এই সময় আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বেশি থাকবে যারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।
এই কর্মক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শিশু কিংবা কিশোররা। যাদের বয়স ১৬ বছরের কাছাকাছি এবং তাদের থেকে বয়সে যারা ছোট তারা এই জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই জনগোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে নীতি নির্ধারণ করা তাই দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, যাদের কাজের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ অর্জন করার স্বপ্ন দেখি তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাং বা সমষ্টিগত কিশোর অপরাধী চক্রে কিশোরদের জড়িয়ে পড়া তাদের সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনুমান করা যায় যার সুনির্দিষ্ট কারণ বিশ্লেষণ করা আবশ্যক।
বাংলাদেশের মতো দেশে এ বিষয়ক গবেষণা অপ্রতুল হলেও যেহেতু এই সমস্যা বৈশ্বিক পরিসরে বিদ্যমান, কাজেই আমরা সেই ধরনের গবেষণার আলোকে এর কারণ অনুসন্ধান করতে পারি এবং আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারি। আমার এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য পাঠক সমীপে সেই বিষয়গুলো সাধারণ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করা।
কিশোর গ্যাং বলতে কী বোঝায়?
কিশোর গ্যাং বলতে মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের এমন সংগঠিত দলদের বোঝায় যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বহু ধরনের মানুষ বসবাস করে এমন শহুরে এলাকায় এই ধরনের দল গড়ে ওঠে। এ দলগুলোর নিজেদের মধ্যে একটি ক্ষমতা কাঠামো থাকে, নিজেদের নির্ধারণ করা এলাকা থাকে এবং নির্দিষ্ট ধরনের অপরাধকেন্দ্রিক লক্ষ্য থাকে।
বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সাথে এদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং প্রতিযোগিতার নানা সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন—টিকটক কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে এদের মধ্যে নিজেদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার একটি প্রবণতা বর্তমানে বেশ লক্ষ্য করা যায়। এটি তাদের প্রাধান্য বিস্তার করার একটি উপায়ও বটে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অপরাধমূলক কাজে দল গঠন করার পেছনের কারণ কী?
কিশোররা সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক কারণে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। মানুষের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার ব্যাপারটি রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোররা যেহেতু তাদের আর্থিক কিংবা অন্যান্য সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানে কাজেই দলবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে সেই সমস্যাগুলোর একটি সমাধান তারা করতে পারে।