রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সংঘাতময়ের দিকে মোড় নিচ্ছে। রাজপথে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি অনড় অবস্থান বিষয়টিকে আরও উসকে দিচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশস্থলের কাছে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজনের মৃত্যু, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার জেরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। অনড় অবস্থানের কারণে সংলাপ কিংবা সমঝোতার পথও রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএনপিসহ বিরোধী বলয়ে থাকা দলগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীসহ তাদের শরিকরা সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। বিএনপিসহ তাদের শরিকদের মোকাবিলায় আওয়ামী লীগও ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সরব রয়েছে। এতদিন দুই পক্ষের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও শনিবার পল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বহুদিন পর আবার হরতাল-অবরোধ ফিরে আসে।
ওইদিন বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, একদল তরুণ তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। সংঘর্ষের সময় যুবদলের এক নেতার মৃত্যু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, বিএনপির নেতাকর্মীসহ তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এছাড়া প্রধান বিচারপতির বাসার প্রধান ফটক, পুলিশ হাসপাতাল, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ তিনটি পুলিশ বক্স, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ২০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নতুন করে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে-এমন মন্তব্য করে বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরামের সাবেক সভাপতি ড. কামাল হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এটা কারও জন্যই সুখকর হবে না। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে, যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। দুই বড় দলেরই উচিত সংঘাত-সহিংসতার পথ পরিহার করে চলা। তিনি আরও বলেন, সরকারি দলকে আরও সহনশীল আচরণ করতে হবে। এভাবে সহনশীল আচরণ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। রাজনৈতিক সংকট আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করার পথ খুঁজতে হবে সব পক্ষকেই। যদিও পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ক্ষীণ হয়ে আসছে সংলাপ-সমঝোতার পথ।
সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। যুগান্তরকে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ধারা এবং উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। এরই অংশ হিসাবে তারা সমাবেশের নামে সহিংস কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে। তারা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর টার্গেট করে হামলা চালায়।
ইসরাইলের সৈন্যরা যেভাবে হাসপাতালে হামলা করেছে, বিএনপিও একইভাবে হাসপাতালে হামলার মতো ঘৃণ্য কাজ করেছে। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আসলে বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন ভন্ডুল করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
যদিও এসব অভিযোগ আমলে নিতে নারাজ বিএনপির যুগ্মমহাসচিব মো. হারুনুর রশীদ। যুগান্তরকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে এবং নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত-সহিংসতা উসকে দিয়ে দেশে একটি ভীতিকর পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।