তানজিম আহমদ সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি, দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।
প্রধান উপদেষ্টা আপনাকে ফোন করেছিলেন। কী কথা হলো তাঁর সঙ্গে?
তানজিম আহমদ সোহেল তাজ: আমি খুবই সম্মানিত হয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল লরিয়েট, বিশ্বব্যাপী স্বনামধন্য ব্যক্তি। তিনি যে এত অমায়িকভাবে আমাকে ফোন দেবেন, আমি এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি, খুবই মুগ্ধ হয়েছি। তিনি ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে আমি যেদিন পদযাত্রা করেছি, সেদিন তিনি দেখা করতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেছেন আমাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। এ বিষয়টা তিনি দেখবেন। আমার বাবাসহ মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় নেতাদের অবদানের কথা বললেন।
আপনি ৩ নভেম্বর তিনটি দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন। বলেছেন এটি আপনার শেষ পদযাত্রা। শেষ পদযাত্রা কেন?
তানজিম আহমদ সোহেল তাজ: আমি এই পদযাত্রাটা তিন বছর ধরে করছি। আগের দুই বছর কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব যে দল দিয়েছিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সেই দল সরকারে ছিল। এটা যদি সত্যিকারের নীতি-আদর্শের আওয়ামী লীগ হতো, অবশ্যই আমার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে ফেলত। তারা তো তা করেইনি বরং উপেক্ষা করেছে।
এবার দেখছি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে অনেকের বিবৃতি আসছে। অথচ দুই বছর আগে আমাকে তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি। দুই বছর আগে আমি তাদের পেজে এমন কমেন্ট করেছি।
ওই যে একাত্তরের ইতিহাস, ওই যে একটা বিবাদ—সেটারই প্রতিফলন। আসলে একটা পরিবার আওয়ামী লীগ নামের দলটাকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এটা আওয়ামী লীগ না।
আমি তো এই ছিনতাই হওয়া আওয়ামী লীগের কাছে কিছু পেলাম না। তাই এবার গেলাম প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে। কারণ, সারা দেশের মানুষের তাঁর ওপর অনেক আশা-ভরসা। আমরা সবাই আশা করছি সংস্কার হবে, যাতে করে আগামী দিনে যে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, তারা যেন সঠিক পথে দেশ পরিচালনা করতে পারে।
আমি কেন বলছি শেষ পদযাত্রা? কারণ, রাষ্ট্রের কাছে আমার বাবাসহ জাতীয় নেতাদের সন্তান হিসেবে তাঁদের প্রতি সম্মান জানানোর অধিকার চাওয়ার বিষয়টি আমাকে খুব লজ্জিত করছে।
এরপরও যদি মানুষের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হয়, তখনো কি এমন পদযাত্রা আর করবেন না?
তানজিম আহমদ সোহেল তাজ: আমি তো অনবরত কথা বলে যাচ্ছি। তবে একই দাবিতে পদযাত্রাটা শেষ করতে চাই, কারণ এতে আমি নিজে বিব্রত হচ্ছি। এটা খুব দুঃখজনক। আমার দাবি তিনটা সহজ। প্রথম, ৩ নভেম্বরকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া, যাতে মানুষ জানতে পারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কারা এই চার নেতা? যাঁরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পৃথিবীতে শুধু দুটি রাষ্ট্র ‘ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্সের’ মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। আমাদের একটা ডিক্লেয়ারেশন অব ইনডিপেনডেন্স আছে—প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স। ওইটার ভিত্তিতে আমরা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ একটা সরকার গঠন করেছিলাম। ইতিহাস সংরক্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে যদি সেই দিনকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা দ্বিতীয় দাবি। আমার তৃতীয় দাবি স্পষ্ট—জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন—সকল বীর, হিরো, সুপারহিরো—যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জীবনী তথা তাঁদের অবদান পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা এবং সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা; যেন একজন তরুণ বা তরুণী পড়ে বলতে পারেন, ‘ও মাই গড, তাঁরা এত বিসর্জন দিয়েছেন দেশের জন্য! এটা অনুপ্রেরণা জাগায়, একদম রক্ত গরম করে ফেলে। তাঁরা আমার দেশের জন্য এত করেছেন, তাহলে আমাদের আরও ভালো কিছু করতে হবে।’ এই যৌক্তিক দাবি পূরণ না করার তো কোনো কারণ আমি দেখছি না।