ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু-বিপদ

সমকাল শেখ রোকন প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬

আজারবাইজানের রাজধানী ‘বাকু’ নামটির আরবি-ফার্সি ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘দমকা হাওয়ার জনপদ’। তিন দিকে কাস্পিয়ান সাগর ও বছরভর বায়ুপ্রবাহের আধিক্য থাকা শহরটিতে ১১-২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘কপ-২৯’ বা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ২৯তম জাতিসংঘ সম্মেলন। সমালোচকরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে বাকুর দমকা হওয়া ভারি হয়ে থাকবে জ্বালানি তেলের গন্ধে। সেটি এই কারণে নয় যে, তেল-গ্যাস থেকে ৯০ শতাংশ রপ্তানি আয় নিয়ে আজারবাইজানের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর; এমনকি দেশটির জাতীয় প্রতীক হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত গ্যাসশিখা; বরং এই কারণে যে, এবারের সম্মেলনে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর খবরদারি বাড়তে বৈ কমতে যাচ্ছে না।


গতবছরের জলবায়ু সম্মেলন বা ‘কপ-২৮’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেক শীর্ষ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ আরব আমিরাতে। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী সুলতান আল-জাবেরকে সম্মেলনের সভাপতি করে আসলে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? ওই সম্মেলনে গৃহীত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি কতখানি কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন আরেকটি সম্মেলন আসা পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি। উপরন্তু এবার তেল কোম্পানির নাচুনি বুড়িরা ঢোলের বারি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।


সদ্য সম্পন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন এক মেয়াদের পর সাবেক হয়ে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার লড়াইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেবল অভিঘাতের প্রথম সারিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তার দিক থেকে নয়, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রশ্নেও। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত ২০১৫ সালের ‘প্যারিস চুক্তি’ থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্বন উদ্গীরণ প্রশমন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন ও সবুজ প্রযুক্তি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থায়ন বিষয়ে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও সংস্থা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। পরবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল চুক্তিটি। 



এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্বিজয়ের পর ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আবারও অবধারিতভাবেই সরে যাবে। উপরন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেশটি দিয়েছিল, সেটিও বেমালুম ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। প্রায় দুই দশক আগে রিপাবলিকানরা যে ‘ড্রিল, বেবি, ড্রিল’ স্লোগান দিত, এবারের নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটিও ফিরিয়ে এনেছেন। এর অর্থ, এই মেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনে বিশেষ জোর দিতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। 


বস্তুত ‘কপ-২৬’ থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল, জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষশক্তি কীভাবে জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক উদ্যোগগুলোকে কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত করতে চায়। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের আগে ফাঁস হওয়া নথি দেখে বিবিসি জানিয়েছিল, সৌদি আরব, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো খোদ জাতিসংঘকে চাপ দিচ্ছে; যাতে করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার গতি ধীর করা হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পেছনে ‘এত অর্থ’ খরচ করা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছিল ধনী দেশগুলো। এখন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও শপথ নেবেন আগামী জানুয়ারিতে, এই নভেম্বরের জলবায়ু সম্মেলনে ট্রাম্পনীতির প্রভাব অবশ্যম্ভবী হয়ে উঠেছে। এমনও হতে পারে, তিনি আগামী কপগুলোতে অংশগ্রহণই করবেন না। সেক্ষেত্রে এই বাস্তবতা এড়ানোর উপায় নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক উদ্যোগগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া গতি পাবে না। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো ‘মার্কিন চাপ’ ছাড়া আরও গাছাড়া ভাব দেখাবে।


প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে মার্কিন রাজা-উজির মারার এই খেলায় বাংলাদেশের কী আসে যায়? এটা ঠিক, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যেসব দেশ প্রথম সারিতে রয়েছে, বাংলাদেশ সেগুলোর নেতৃস্থানীয়। অভিঘাত মোকাবিলায় যে দেশগুলো নীতিগত ও আর্থিক প্রস্তুতি সবার আগে নিয়েছে, বাংলাদেশ তারও প্রথম সারিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের অনুঘটনে অধর্তব্য ভূমিকা সত্ত্বেও এ দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন প্রভৃতি লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা যেভাবে নিজস্ব তহবিল গঠন করেছিলাম, সেটাও বিশ্ববাসীকে বিলক্ষণ বিস্মিত করেছিল। যদিও সেই তহবিল কীভাবে স্বজনপ্রীতির প্রকল্পে প্রকল্পে ঢুকে নয়-ছয় হয়েছে, কীভাবে গোষ্ঠীপ্রীতির ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখতে গিয়ে লুটপাটের শিকার হয়েছে, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us