হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান ও মধ্যপ্রাচ্য সংকট

কালের কণ্ঠ ড. ফরিদুল আলম প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭

ইসরায়েল একের পর এক হামাস এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার পর তারাও বারবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে আদর্শিক দিক দিয়ে এই সংগঠনগুলো কতটুকু শক্ত অবস্থানে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় কঠিন, এটি বুঝতে পেরেও তারা জীবন বাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে তাদের ওপর ইসরায়েলের দীর্ঘ সময়ের অমানবিক আচরণ এবং জুলুম-নির্যাতনের কারণে।

আসলে সময় এবং পরিস্থিতি আজ তাদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তুলনামূলকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতির পাল্লাটা হামাস এবং হিজবুল্লাহর দিকে ঝুঁকে থাকলেও তাদের প্রাণপণে চালিয়ে যাওয়া এই লড়াই বিশ্বমানবতাকে আজ তাদের পাশে দাঁড় করিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা আধিপত্যবাদের মুখোশ খোদ তাদের নিজ দেশেই উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যুদ্ধবিরতি নিয়ে লোক-দেখানো আলোচনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত পাখির মতো মানুষ হত্যা করে ইসরায়েল কি ভবিষ্যতের জন্য তাদের নিরাপত্তাকে আরো জটিল করে তুলছে না? এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের বিরতি হলেও এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধান। এটি না হলে এ ধরনের হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটতে থাকবে।


এদিকে প্রথমে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের আগেই সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাসেম সফিউদ্দিনকেও হত্যা করে ইসরায়েল। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে হিজবুল্লাহ অবশ্য বেশি সময়ক্ষেপণ করেনি। নইম কাশেমকে নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের শূন্যস্থান পূরণ হলো। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই নইম কাশেম কোনো দিক দিয়েই প্রয়াত নেতা হাসেম সফিউদ্দিন, এমনকি হাসান নাসরাল্লাহর চেয়ে কম যোগ্য নন, বরং তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা।




দলটির শুরু হয়েছিল যে কয়জনের হাত ধরে, তাঁদের মধ্যে নইম কাশেম অন্যতম ছিলেন। হিসাব মতে, তাঁর আরো আগেই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসার কথা ছিল। ১৯৯১ সালে তৎকালীন হিজবুল্লাহপ্রধান আব্বাস আল-মুসাওয়ি কর্তৃক দলটির উপপ্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন নইম কাশেম। পরের বছর ইসরায়েলের হেলিকপ্টার হামলায় মুসাওয়ির মৃত্যুর পর নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন হাসান নাসরাল্লাহ, নইম কাশেম থেকে যান উপপ্রধান হিসেবেই। অতঃপর এই ক্রান্তিকালে দলের হাল ধরার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই এসে পড়ল।


নইম কাশেমকে হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করা হয়নি। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘সাময়িক নিয়োগ, দীর্ঘদিনের জন্য নয়।’ মূলত এই বার্তার মধ্য দিয়ে তাঁকেও তাঁর পূর্বসূরির মতো পরিণাম ভোগ করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এর আগেও ইসরায়েলের হামলা থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন এবং নতুন প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ ছাড়া ইসরায়েল সরকারের দাপ্তরিক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘নইম যদি তাঁর পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাহলে হিজবুল্লাহপ্রধান হিসেবে তাঁর মেয়াদ সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত হতে পারে।’


এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বর্তমান অবস্থাও অনিশ্চিত, বিষয়টি কোন দিকে গিয়ে গড়াবে, তা বলা যাচ্ছে না। গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ইরানের হামলার জবাবে ২৫ অক্টোবর ইরানের তিনটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইরানকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হলেও ইরানের বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ইরান যেকোনো সময় ইসরায়েলের ভূখণ্ডে আবারও হামলা চালাতে পারে এবং তা হতে পারে আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে। যদি এমন কিছু হয়, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর জন্য নির্বাচনের হিসাব যতটা জটিল হয়ে দাঁড়াবে, তার চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের জন্যও বিষয়টি অস্বস্তিকর হবে। এ কথা সবারই জানা যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে মার্কিন সরকারের ভূমিকা দ্বারা প্রভাবিত। বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু ক্ষেত্রে লোক-দেখানো প্রতিক্রিয়া জানানো এবং যুদ্ধবিরতির কথা বলে এলেও তারাই ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। যদি সত্যি ইরান আবারও ইসরায়েলে হামলা করে বসে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন সামনে রেখে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী হবে কিংবা নির্বাচনের পরপরই বা তারা কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের জন্য নতুন ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তবে এটিও ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সমন্বিত শক্তি, সেই সঙ্গে পশ্চিমাদের সমর্থন—সব কিছু মিলিয়ে ইসরায়েল ইরানের চেয়ে ঢের শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছে, এর প্রায় প্রতিটিই রুখে দিতে পেরেছিল ইসরায়েল, পক্ষান্তরে ইরানের ভূমিতে ইসরায়েলের হামলায় তাদের সামরিক স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা ইসরায়েলকে আরো আগ্রাসী করে তুলতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us