খুব হতাশার মধ্যে দিন কাটছে। ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় ইতিহাসের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইতিহাস বিষয়ে নিজের মনোযোগ স্থির করলাম। পরে ইতিহাসের শিক্ষক হলাম। বিশ্বসভ্যতা ও বাংলার ইতিহাস অধ্যয়ন করতে গিয়ে ইতিহাসের গভীরে যাওয়ার সুযোগ হলো। পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যোগ দিয়ে কিছুটা প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। এতে ইতিহাস বুঝতে পারাটা আরেকটু সহজ হলো।
বুঝতে শিখলাম ইতিহাস-অসচেতন জাতি অন্ধত্বকেই শুধু বরণ করে। আমার প্রথম ইতিহাসভিত্তিক বই প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। তখন আমি এমএ ক্লাসের ছাত্র। আমার শিক্ষক প্রখ্যাত অধ্যাপক এ আর মল্লিক স্যার বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন। এখানে একটি বাক্য তিনি লিখেন-‘ইতিহাস জীবন্ত জাতির পরিচায়ক।’ পরে শিক্ষকতার পেশায় এসে বুঝতে পারলাম, ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা মৃতবৎ হয়ে পড়ছি যেন।
ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। ইতিহাস রচনা পদ্ধতি যে অনেক আধুনিক হয়েছে এর খোঁজ খুব একটা রাখা হয় না। আমাদের দেশের ইতিহাস অনেককাল ধরে আটকে ছিল রাজনৈতিক ইতিহাসের গণ্ডিতে। তাই প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস ছিল শাসকদের ইতিহাস। দরবারি ইতিহাস তো বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হতো না। শাসকের ইচ্ছেরই প্রতিফলন হতো সেখানে। গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র আবিষ্কারের পর ইতিহাস রচনা রাজনৈতিক ইতিহাসের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে। লেখা হতে থাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস, অর্থনৈতিক ইতিহাস, শিল্পকলার ইতিহাস। এখানে শাসকের শাসন তেমন থাকে না। তাই তথ্যসূত্র বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়। ইতিহাস কখনো শেষ সত্যে পৌঁছাতে পারে না। সত্যে পৌঁছার চেষ্টা করে মাত্র।