সংস্কার প্রয়োজন সামাজিক সাংস্কৃতিক বলয়ে

বণিক বার্তা রুশিদান ইসলাম রহমান প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫১

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর বিগত বছরগুলোয় আবার পিছিয়ে যাচ্ছিল। তাই প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালেন যে সংস্কারের জন্য এখনই যথাযথ সময়। ‘এ সুযোগ আর আসবে না...সংস্কার করে যেতে হবে’ (প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর, ২০২৪)। কী কী বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করতে সবাইকে উৎসাহিত করা হয়েছে।


সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ লেখা। সংস্কার প্রয়োজন অথচ এখনো মনোযোগ পায়নি যেসব বিষয় তার মধ্যে কিছু আর্থসামাজিক দিক রয়েছে, যেমন ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন এবং এনজিও কার্যক্রম, নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাস, আঞ্চলিক ও শহর-গ্রামের বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থানের মান ইত্যাদি।


তবে এ লেখায় আর্থসামাজিক পরিসরের বাইরের একটি বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তা হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রসার ও উন্নয়নের জন্য সংস্কার কার্যক্রম। এক্ষেত্রে সংস্কারের দায়দায়িত্ব পালনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতা দরকার হবে।


বিষয়টি নিয়ে চিন্তার উদ্গম যেভাবে হলো সেটা শুরুতে বলি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। তাতে আমাদের ভাষার ও দেশের মর্যাদা বাড়ল, আমাদের প্রাণের ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় তা প্রমাণ হলো। এ আদর্শ অনুসরণ করে এখন কাজ শুরু করতে হবে বাংলা ভাষার প্রসার ও উন্নয়নে।


এ পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রথমেই একটি মূলকথা আমাদের মননে চিন্তায় চেতনায় ধারণ করতে হবে। তা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, দুর্নীতিমুক্ত টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দেশের টিকে থাকার ও জনগণের বাস্তব জীবনে সম্মানজনক অবস্থানের জন্য অত্যাবশ্যক, সেগুলোই কিন্তু সব নয়। মর্যাদাপূর্ণ, আনন্দিত-চিত্ত জনমানসের জন্য এবং মৌলিক চেতনা বিকাশ করার কৌশল হিসেবে একটি অন্যতম প্রয়োজন আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলার প্রসার, উন্নয়ন ও প্রয়োগ।


ভাষার প্রসার ও উন্নয়নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে সব স্তরের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ব্যবহার। আর বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে শুধু স্কুল শিক্ষা ও সাহিত্যে নয়, সরকারি দাপ্তরিক কাজে, ব্যবসা-উপার্জন কাজে, সভা-সেমিনারে আলাপ-আলোচনায়, গবেষণা-বিশ্লেষণে।


এ স্বীকৃতির পর চিহ্নিত করতে হবে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা বিতর্কের মাধ্যমে কৌশলে স্থির করতে হবে।



তাহলে কি একটি কমিটি/কমিশন দরকার, নাকি এটা সহজ কাজ, যেভাবে চলছে চলুক, যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে করুক—সেই পথ? এক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা রাখার কথা—সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ইত্যাদি রয়েছে।


এসব প্রতিষ্ঠান যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখেছে সেখানে বাংলা ভাষা সর্বস্তরে গ্রহণ, ব্যবহার ও প্রসারের বিষয় নেই। আর যেসব ‘ভিশন ও মিশন’ লিখিত রয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে, সেগুলো অর্জনের কাজেও ব্যর্থতার নানা অভিযোগ আলোচিত হচ্ছে।


ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং বিপরীত চিত্রই দৃশ্যমান। বাংলা ভাষা উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রসার লাভ করছে না। শুধু যারা তত ভালো ছাত্র নয়, যাদের ইংরেজি জ্ঞান যথেষ্ট নয়, তারাই বাংলা মাধ্যম ব্যবহার করছে। দশম বা দ্বাদশ শ্রেণী পড়াশোনা শেষ করে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী শুদ্ধ বাংলায় মনের ভাব ও যুক্তি লিখিত বা মৌখিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আকর গ্রন্থ অনূদিত হচ্ছে অতি সামান্য সংখ্যক। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে। কিছু কিছু পরে বাংলায় অনূদিত হয়, যদিও সেগুলো পড়ে অনেক সময়ই মনে হয় যে ইংরেজিটা পড়াই সহজ হতো। ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিশেষত বড় প্রতিষ্ঠানে, হিসাবনিকাশ, চিঠিপত্রে ইংরেজির প্রাধান্য। ফলে বাংলা দক্ষতা যত ভালোই হোক, সেটা চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতা বলে ধরা হয় না। এসব বিষয়ে পরিবর্তন কোন দিকে কতখানি হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা সীমিত।


সুতরাং যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে কার্যকর করতে হবে। সেটা করার জন্য অগ্রগতি মূল্যায়নের ও নতুন পদক্ষেপ ও কৌশল গ্রহণের জন্য একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন (কমিটি বা কমিশন) করার জন্য প্রস্তাব করছি। আগামী কয়েক মাসে সেই প্রতিষ্ঠান কিছু মূল্যায়ন করে কীভাবে ভাষার ব্যবহার ও উন্নয়ন প্রসারিত করা যায় তার কৌশল গ্রহণ করবে।


তার পরও এ সংস্কার প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে কিনা যাতে প্রতি ছয় মাস পর কোন কোন বিষয়ে কতখানি অগ্রগতি হয়েছে তা জনগণের জন্য প্রকাশ করতে পারে, সেই সিদ্ধান্তও নিতে হবে।


সেসব কৌশল বাস্তবায়ন কীভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা যাবে সে বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার নাকি বিদ্যমান কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়িয়ে সম্প্রসারিত করা যৌক্তিক, তা নির্ধারণ করতে হবে।


এ সংস্কার কমিশনে শুধু বাংলা ভাষাবিদ বা সাহিত্যের ছাত্র-শিক্ষক, কবি সাহিত্যিক নয়, অন্তর্ভুক্ত থাকবে নানা দিকের প্রায়োগিক জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ। শেষ বিষয়টি একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন।


কৌশলটি প্রণয়ন করার কাজে শুধু বাংলা ভাষার জ্ঞান নয়, আরো প্রয়োজন হবে গবেষণা (প্রয়োজনীয় গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে) ও প্রযুক্তি জ্ঞান। যা থেকে কৌশল আহরণ করা যাবে কীভাবে ভাষার জ্ঞান ও ব্যবহার পদ্ধতির সঙ্গে কম্পিউটার ও আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করে ভাষার ব্যবহার প্রসার লাভ করতে পারবে। এসব বিশেষজ্ঞের হাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ক্ষমতা দিতে হবে। অর্থায়ন তো অবশ্যই প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু সংস্কার ধারার প্রভাব ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে, তাই কাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হবে, কী দায়িত্ব দেয়া হবে—সেসব বিষয়ে প্রয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-শিক্ষক, সাহিত্যিক-গবেষক সবার মতামত নিতে হবে। এটুকু কি আশা করা যায় যে বিষয়টি রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনীতির উন্নয়ন কৌশলের প্রয়োজনের মতোই গুরুত্ব পাবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us