ছাত্র-জনতার এক রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের প্রাথমিক কারণ হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি বর্ষণে শতশত মানুষ হত্যা। এ সময় অন্তত ৮০০ মানুষ নিহত ও ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তবে এই প্রাথমিক কারণের পেছনে রয়েছে শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলজুড়ে ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি নিপীড়ন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠন, সরকার ঘনিষ্ঠদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, সচিবালয় থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট গভীর জন অসন্তোষ। গণমাধ্যমের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বানোয়াট পরিসংখ্যান আর বিভিন্ন দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমে দুঃশাসনকে আড়াল করার চেষ্টা করা হলেও তা হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতন ঠেকাতে পারেনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য শেখ হাসিনার শাসনামল থেকে শিক্ষা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকেই এখানে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র উপস্থাপন করা হলো।
নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। কিন্তু এরপর তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে এমন এক নির্বাচনী ব্যবস্থা কায়েম করেন, যে ব্যবস্থায় পাঁচ বছর পরপর নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কোনো ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ ছিল না। এসব নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি বা করতে পারেনি, আর অংশগ্রহণ করলেও ব্যাপক ভোট জালিয়াতির স্বীকার হয়। জালিয়াতি শুধু যে নির্বাচনের দিন হয়েছে তা নয়, নির্বাচনের আগের সময়গুলোতেও বিরোধী দলগুলোকে স্বাধীনভাবে কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে দেওয়া হয়নি, হাজার হাজার গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে, এলাকা ছাড়া করে নির্বাচনের মাঠ প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন করা হয়।