বাংলা একাডেমিতে কেমন সংস্কার চাই

ডেইলি স্টার ইমরান মাহফুজ প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩০

টি এস এলিয়ট কবিতায় লাইলাক-ফোটা এপ্রিলকে 'নিষ্ঠুরতম মাস' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। বিরানভূমিতে ফুলও যে নিষ্ঠুরতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে তা এলিয়টের কবিতা থেকে জানতে পারি। এ ব্যাপারে আমাদেরও আছে ভয়াল বাস্তবতা। স্বাধীনতার আগে সত্তরের নভেম্বর দেখেছিল উপকূল ভাসানো, প্রাণবিনাশী জলোচ্ছ্বাস। একাত্তরের নিষ্ঠুরতম মাস ছিল কালরাত্রির মার্চ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট শোকের সঙ্গে পালন করে আসছিল। ২০২৪ সালে ছাত্রজনতা দ্রোহে-বিপ্লবে জুলাইকে ৩৬ দিনে টেনে নিয়ে গেলেন স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে আরাধ্য মুক্তির অভিপ্রায়ে।


সে দ্রোহে 'ভোটবঞ্চিত তারুণ্য' অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেললেন। ঘোর আষাঢ়-শ্রাবণেও এমন প্লাবন এ দেশ দেখেনি। এ যেন নজরুলের উষার দুয়ারে আঘাত হেনে রাঙা প্রভাত আনার ছন্দময় বিপ্লব। কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন বৈষম্যবিরোধীতায় রূপ নিয়ে স্বৈরাচার পতনের এক দফায় পরিণত হয়। তাতে আত্মাহুতি দেন আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মতো শত শত প্রাণ। বিশ্ব দেখে ফ্যাসিবাদের নির্মম পরিণতি।


ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আমূল সংস্কারের সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানোর বড় সুযোগ এখন। কারণ সাংস্কৃতিক শক্তিই একটি জাতিকে স্বকীয়তায়- মননশীলতায় অগ্রগামী করে তুলতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও নজরুল ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি; যার প্রথম কাজ এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে 'দলীয় ভূত' তাড়িয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কারও তাঁবেদারি না করে দেশ ও দশের হয়ে কাজ করা।


খ.


বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালক্রমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষকদের ভরসাস্থলে পরিণত হয় বাংলা একাডেমি। কিন্তু সরকারি আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতোই তথাকথিত স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের নজির আমরা দেখেছি। দেখেছি নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার উদাহরণ। দেখেছি এখান থেকে প্রকাশিত প্রকাশনায় মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হতে। বাংলা একাডেমির পুরস্কারে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও অনেক। সব মিলিয়ে একাডেমির নৈতিক অধঃপতন কমিয়ে দিয়েছে এ পুরস্কারের গুরুত্ব।



অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলা একাডেমি না। এটির যে আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে তা মন্ত্রণালয় ও একাডেমির কর্মকর্তা কর্মচারিদের আচরণে বুঝা যায় না। বিশেষ করে ড. মুহম্মদ শহীদুলাহ্দের সাধনার একাডেমিকে বলা হয় 'বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক'। কিন্তু নিকট অতীতে একাডেমির সার্বিক কর্মকাণ্ডে এই স্লোগানের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাইনি; বরং বিভ্রান্ত হয়েছি।


প্রসঙ্গে গ্রন্থাগার বিশেষজ্ঞ ও প্রাক্তন পরিচালক ফজলে রাব্বী তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করছেন, 'বাংলা একাডেমি একটা দ্বীপের মতো। এটি জন্ম থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারও এর বিরুদ্ধে। এর কারণ বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক। এ দেশে সরকার ও জনতা পরস্পরবিরোধী। গণতন্ত্র ও সরকার সম্পূরক শক্তি নয় বরং বিরোধী। এর প্রাণ হচ্ছে লেখক গবেষক।'


কিন্তু অন্তত গত দুই দশকে দেশের বিভিন্ন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে একাডেমি সংশ্লিষ্ট লেখক-গবেষকদের সেই ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনি। প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক-রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের যে ২১ দফা দাবি দিয়েছিলেন, তার একটি দফা ছিল বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি। সেই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে আজ অবধি তার আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়ন যে হয়নি সেটা হলফ করেই বলা যায়।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অস্থির সময়ে গত ১৬ জুলাই এ বিষয়ে মতামত জানতে ফোন করেছিলাম দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারজন কবিকে। তাদের মধ্যে তিনজনের কবিতা বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বার বার উচ্চারিত হয়।


এই কবিদের দুইজন জানালেন, অনেকদিন ধরে তারা ঘরবন্দী। বাইরের খবর রাখেন না। তাই মতামত দিতে পারবেন না। তৃতীয় জন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। চতুর্থজন ছিলেন গত শতকের আশির দশকে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা জাতীয় কবিতা পরিষদের শীর্ষ ব্যক্তিদের একজন। তিনি ফোনই ধরেননি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us