বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে ৯৮’র ‘বীজ প্রতারণা’ যেন ফিরে না আসে

ডেইলি স্টার পাভেল পার্থ প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:০১

১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৮, ২০১৭ ও ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালের বন্যাও জনপরিসরের আলাপের বিষয় হয়ে ওঠে। তবে বিগত বন্যাগুলোর সময় বন্যার ভয়াবহতা, ত্রাণ-দুর্নীতি, সাহায্য না পাওয়া, ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ এবং রাষ্ট্র-জনতার অসহায়ত্ব নিয়ে বেশি আলাপ হতো। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় ট্রান্সবাউন্ডারি-ডিক্টেরটরশিপ থেকে শুরু করে ন্যায্য পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা—সব নিয়েই বাহাস উঠেছে। যেন জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বহু আলাপের দুয়ার খুলেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপদাহ কিংবা অনাবৃষ্টির মতো আপদ বা হেজার্ড হলে অবশ্যই তা বাস্তুতন্ত্র এবং জনজীবনে বিপদ বা ভালনারাবিলিটি তৈরি করে। আপদ হলে বিপদ বাড়ে। তবে সবক্ষেত্রে সবার জন্য বিপদ বাড়ে না। যারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে তাদের বেশি বিপদ হয়। অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক, রাজনৈতিক নানাবিধ ঝুঁকি থাকতে পারে।


আপদ বা হেজার্ডকে আটকানো যায় না কিংবা নোটিশ দিয়ে বন্যাকে বন্ধ করা যায় না। আপদ হলে যাতে বিপদ না বাড়ে, এর জন্য প্রস্তুতি দরকার হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, বাস্তুতন্ত্র ও রাষ্ট্রের প্রস্তুতি। কিংবা আন্তঃরাষ্ট্রিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রস্তুতি। যত বেশি প্রস্তুতি তত বেশি ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ঝুঁকি কমলে আপদ হলেও বিপদ কম হয়। তাই দেখা যায় সব ধরনের আপদে সবাই সমানভাবে দুর্গতিতে পড়ে না। কেউ কম, কেউ বেশি, কেউ ভয়াবহভাবে বেশি। আবার কারো কারো দুর্গতি জোর করে আড়াল করা হয়। সামাজিক প্রান্তিকতা, কাঠামোগত বৈষম্য, নিওলিবারেল করপোরেট বাজার কিংবা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব জনগণ এবং বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই দেখা যায়, কেবলমাত্র ত্রাণ বা সহযোগিতা কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেও কোনোভাবেই কোনো আপদজনিত বিপদ ও ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সর্বস্তরে আমূল সংস্কার। বহুস্তরের সর্বজনীন, অংশগ্রহণ এবং অর্ন্তভূক্তিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি।


তাহলে কী করতে হবে? দেশের সব প্রান্তের শ্রেণি-পেশা-বয়স-লিঙ্গসহ সব বর্গের মানুষকে যুক্ত করলেই কী এই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব? না সম্ভব নয়। সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত মিনিংফুল হতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবার কাজ ও অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে মর্যাদাজনক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হলেও এই অর্ন্তভূক্তিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোটি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি।



কেন পারিনি? কারণ আমাদের ভেতর টিকে থাকা প্রবল হেজিমনি, ক্ষমতার দম্ভ, বাইনারি দৃষ্টিভঙ্গি আর কতৃর্ত্ব। বিগত সময়ের সব কর্তৃত্ববাদী রেজিমে আমরা তাই দেখেছি। বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো খুব শক্তিশালী এবং বিশ্বে উদাহরণমূলক। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র দ্রুত সাড়া দেয়। দেখা যায়, কেবল কোনো আপদ বা হেজার্ড আঘাত করলে সেই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে তৎপর হয় রাষ্ট্র। কিন্তু বাদবাকি সময়টা এক প্রশ্নহীন হাইবারনেশনে কাটায়। সব অঞ্চলের জন্য রাষ্ট্রের দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সমানতালের নয়। তাই দেখা যায়, কেবল ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত উপকূলেই কেবল আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হয়। কিন্তু খরাপ্রবণ বরেন্দ্র কিংবা আকস্মিক বন্যাপ্রবণ হাওরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব।


সাম্প্রতিক ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি কিংবা নোয়াখালীর বন্যায় দেখা গেল দুর্যোগপ্রস্তুতির অভাবের কারণে জনজীবনে ভোগান্তি বেশি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। দুর্যোগপ্রস্তুতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দেশের সব ভৌগলিক ভিন্নতা ও সব সামাজিক বর্গকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ, প্রাণপ্রকৃতি ও বাস্তুতন্ত্রের জানমাল সুরক্ষাকে অবজ্ঞা ও অবহেলার দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা বদলাতে হবে। দেশে ৩০টি অ্যাগ্রোইকোলজিক্যাল জোন, ১৭টি হাইড্রোলজিক্যাল জোন আছে। বরেন্দ্র, বিল, চর, উপকূল, বন, গড়, পাহাড়, সমতল এবং শহর এলাকা আছে। দুর্যোগের ধরন এবং ক্ষয়ক্ষতির ধরন দেশের সব অঞ্চলে এবং নানা সামাজিক বর্গের জীবনে একরকম নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার লোকায়ত জ্ঞান এবং জনগোষ্ঠীর তৎপরতাকে জানাবোঝা খুব জরুরি।


লোকায়ত দুর্যোগ প্রস্তুতি জ্ঞানকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে আমরা এখনো যুক্ত করতে পারিনি। কর্তৃত্ববাদী জ্ঞানকাঠামো লোকায়ত জ্ঞানকে সর্বদাই কোণঠাসা করে রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশে খুব কম গ্রামীণ সমাজ পাওয়া যাবে যেখানে খনার বচন সক্রিয়ভাবে অনুশীলন হয়। বহু লোকায়ত দুর্যোগ জ্ঞান ও প্রস্তুতির শক্তি নিদারুণভাবে নিখোঁজ হয়েছে। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে খুব কম তরুণ খুঁজে পাওয়া যায় যারা বন্যা, খরা বা কোনো দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস পাঠ করতে জানে। দেশে খুব কম জায়গা আছে যেখানে স্থানীয় জেনেটিক রিসোর্স এবং প্রাকৃতিক সম্পদ টিকে আছে, যা কোনো এলাকার দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় টেকসই ভূমিকা রাখে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us