আমরা দায় এড়াতে পারি না

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬

আমার শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদ আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। ১৯৮৪ সালের শুরুতে আমি যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে নতুন যাত্রা শুরু করি, তখন জাহাঙ্গীরনগর ছেড়ে স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেছেন। ওই সময় একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। স্যার বললেন, দেখ একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্পর্শে থাকায় চারপাশের মানুষ ও সমাজ আলোকিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার কথায়, আচরণে, পোশাকে, মানবিকতায় একটি পরিমার্জিত রূপ থাকবে।


সমাজের মানুষ এ পরিবারের মানুষদের দেখে সম্ভ্রম জানাবে। প্রভাবিত হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিবান মানুষরাই অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করবে। সেখানেও থাকবে তাদের মননের প্রকাশ। সেটিই সৌন্দর্য। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দি করে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। তখনই ফুঁসে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শানিত মননের পরিচয় দিয়ে ১১ দফা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। যেখানে কৌশলে ৬ দফাকে রেখে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আরও ৫টি দাবি যোগ করে মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ আন্দোলনের তোড়েই ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।



আমার দূরদর্শী শিক্ষক সেদিন বলেছিলেন, ‘সতর্ক থেকো, এই এখনকার অপেক্ষাকৃত সুন্দর সময় হয়তো সামনে থাকবে না। রাজনীতি আরও নষ্ট হতে থাকবে। সৌন্দর্য হারাতে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনেকের মধ্যেই কাম্য সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য কমে যেতে থাকবে।’ নিজেকে সতর্ক রেখে শিক্ষা, গবেষণা ও লেখালেখির মধ্যেই ব্যস্ত থেকো। দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে থেকো। চেষ্টা করবে তোমার ছাত্রছাত্রীরা যাতে পথভ্রষ্ট না হয়।


স্যার গত হয়েছেন অনেক বছর। চেষ্টা করেছি, কিন্তু স্যারের সব পরামর্শ পালন করার যোগ্যতা হয়তো আমার নেই। নিজেকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পারলেও ছাত্রছাত্রীদের সঠিক পথ হয়তো দেখাতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যি এখন সংস্কৃতিবান শোভন মানুষের বড় অভাব।


অনেকদিন থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের মধ্যে বেশ ফাটল ধরেছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, যদি রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্ব না পেত-মুক্তমনা পণ্ডিত অধ্যাপকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক হতেন, দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ না হতো, যোগ্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিমার্জন করা যেত এবং দলীয় রাজনীতির নষ্ট প্রভাব না থাকলে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও যুক্ত থাকত না।


এ সময়ের মতো দ্বৈত চরিত্র থাকত না শিক্ষার্থীদের। যেখানে গণআন্দোলন করে রক্ত দিয়ে একদিকে দাবি আদায় করছে, অন্যদিকে তাদের কেউ কেউ খুনি-সন্ত্রাসী হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আলোকিত ভুবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।


সত্তর ও আশির দশকের প্রথম দিককার কথা বলছি, আমাদের তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বকাল চলছে। তখনো ক্যাম্পাসে মুজিববাদী ও জাসদ ছাত্রলীগের মধ্যে মাঝে মধ্যে মারামারি হতো, রক্ত ঝরত। এরপরও কতগুলো বিষয় মেনে চলত সবাই। সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক অটুট ছিল। ভিন্নমতের হলেও একই বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করা কর্তব্য মনে করা হতো।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us