বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান দুটি চেতনার একটি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। অর্থনৈতিক বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হলে প্রথমেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তারা মুখে বললেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কেউই আন্তরিক ছিলেন না। দিন যতই গড়িয়েছে, দুর্নীতির মাত্রা ততই বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০০১ সালে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশকে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। ২০০১ সালে টিআই দুর্নীতির যে ধারণা সূচক প্রকাশ করেছিল তার ভিত্তি বছর ছিল ২০০০ সাল, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর গত সাড়ে ১৫ বছরে দুর্নীতি কতটা বেড়েছে তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন হয় না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ পেলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলা হতো। কিন্তু দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের কারণে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যত উপহাসের বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। গত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের স্বেচ্ছাচারী শাসনামলে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। সেই অপকর্মের দায়ভার এখন জাতি বহন করছে।