পোশাকশিল্পে অস্থিরতা: স্বপ্ন দেখতে সমস্যা কী

আজকের পত্রিকা মো. মিজানুর রহমান প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬

২০২৪ সালটি তৈরি পোশাকশিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হতে পারবে মনে হচ্ছিল। এ দেশের শ্রমিক শ্রেণির অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। প্রথম অবস্থানে চীন। বর্তমান বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখানে চীনের হিস্যা ৩১ শতাংশের কিছু বেশি। দেশে এ সেক্টরে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ রকম বিশাল কর্মসংস্থান আর কোনো সেক্টরে নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে মোট লোকবল আছে ৪৩ লাখ ১৬ হাজার। এর ৬২ শতাংশ নারী শ্রমিক। কারখানা আছে ৪ হাজার ১১৪টি। গত দুই অর্থবছরের চিত্র অনুযায়ী পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ছিল। যেমন, ২০২২ সালে ৪ হাজার কোটি ডলার এবং ২০২৩ সালে ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। মোট রপ্তানির  ৮১ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। অথচ এই তৈরি পোশাকশিল্পের কার্যক্রম এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


তৈরি পোশাক কারখানার চলমান অস্থিরতায় পোশাক খাতকে সমস্যায় ফেলেছে। বাংলাদেশের বিকল্প দেশে রপ্তানি অর্ডার চলে যাচ্ছে। কারখানার মালিকদের ধারণা, কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি অর্ডার প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব রপ্তানি অর্ডারের বড় অংশ যাচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তানে। অর্ডার বাতিল হলে পুনরায় ফিরিয়ে আনা খুবই দুষ্কর। সাম্প্রতিক বন্যা ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কারণে এর আগে-পরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় অনেক ক্রেতা বাংলাদেশে আসছেন না।


সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব করার কারণে চুক্তিবদ্ধ মূল্যের চেয়ে কম মূল্য পরিশোধে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা হয়। চুক্তির শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ২০০-২৫০ গুণ বেশি ব্যয়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থাও হাতে নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে লাভের চেয়ে সুনাম রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে। 



উৎপাদন হওয়ার পর রপ্তানি আদেশ বাতিল হলে ‘স্টকলট’ হিসেবে স্থানীয় বাজারে সস্তায় মালামাল বিক্রি করে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে পুঁজি উদ্ধার করাই কঠিন হয়ে পড়ে। অতীতে এ রকম ঘটনার কারণে অনেক কারখানার মালিক দেউলিয়া হয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রম অসন্তোষ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ। এর সঙ্গে আছে তীব্র গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংকট। তা ছাড়া, বন্দরের অহেতুক ঝামেলা তো আছেই, যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় নেই। এসব ঘটনায় উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বাইরের ক্রেতার কাছে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে।  


কিছুদিন আগে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ায় আন্দোলনের মুখে মালিকপক্ষও বেকায়দা অবস্থায় পড়েছিল। সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্প অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে চলছিল। নিরুপায় হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। যে কারখানা শ্রমিকদের চাকরিতে নিয়োগ দিল, সময়মতো বেতন ও ভাতা পাচ্ছিল, তার প্রতি কেন ক্ষোভ থাকবে? মালিকের প্রতি ক্ষোভ কেন কারখানার ওপর চড়াও হবে? এবারের বিক্ষোভে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় বিগবস করপোরেশন নামে একটি কারখানার গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হলো। কারখানায় উৎপাদন কী করে হবে? শ্রমিকেরা কি সেটা ভেবে দেখেছেন? 


শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও অসন্তোষ কমেনি, বরং নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক দাবি তুলে কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। প্রথমে মজুরি ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে মাঠে নামেন শ্রমিকেরা। পরে তাঁরা চাকরির ক্ষেত্রে সমতার দাবিও জানান। পাশাপাশি তাঁরা বেকারদের জন্য চাকরি ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি তোলেন। কর্মী ছাঁটাই করার বিষয়টিও আনেন। শ্রমিকনেতা ও মালিকপক্ষ তাঁদের সব দাবি-দাওয়া যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা মনে করেন, যে ধরনের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে তা সব পূরণযোগ্য নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযৌক্তিকও। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us